আজ খবর ডেস্ক:
শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি (SSC Scam) থেকে গরু ও কয়লা পাচার (Cattle/ Coal Smuggling) নিয়ে কিঞ্চিৎ ব্যাকফুটে রাজ্যের শাসক দল।
সেই পরিস্থিতিকে কাজে লাগাতেই একের পর এক কর্মসূচি নিচ্ছে বাম দলগুলো।
শুক্রবার যেমন “চোর ধরো, জেলে ভরো” স্লোগান তুলে সল্টলেকের CGO Comlex অভিযান করল কলকাতা জেলা বামফ্রন্ট (Left Front)। পুলিশের অনুমতি মেলেনি। তবে তার জন্য মিছিলের ভিড় অথবা তেজ কিছু কম ছিল না!
এই মুহূর্তে ইডি (ED)/ সিবিআইয়ের (CBI) হাতে থাকা
যাবতীয় তদন্ত দ্রুত শেষ করার দাবিতে এদিন পথে নেমেছিলেন বাম কর্মী সমর্থকরা।


পাশাপাশি যারা এখনও অধরা, তাদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবিও ছিল। এদিন মিছিলে ছাত্র-যুব সংগঠন, সিপিএম ও বামফ্রন্টের একাধিক সংগঠন অংশ নেয়। বস্তুত শুক্রবার বিকেল থেকে লেকটাউন হয়ে সল্টলেক যাওয়ার গোটা রাজপথ জুড়ে ছিল শুধুই লাল পতাকার ভিড়।

গত বেশ কয়েক মাস ধরে কখনও “পাহারায় পাবলিক”, “চোর ধরো ও জেল ভরো”, কখনও আবার “নজরে পঞ্চায়েত”; একের পর এক প্রচার কর্মসূচি নিয়ে পথে নেমেছে সিপিআইএম (CPIM) নেতৃত্ব।
রাজনৈতিক মহলের মতে, পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে রাজ্য রাজনীতিতে হারানো জমি পুনরুদ্ধারে সচেষ্ট বামেরা। বস্তুত অনেকেই মনে করছেন, সিপিআইএম রাজ্য সম্পাদক বদল এবং রাজ্য কমিটিতে এক ঝাঁক নতুন মুখ অন্তর্ভুক্তির পর থেকেই আন্দোলনের ঝাঁঝ বাড়িয়েছে আলিমুদ্দিন।
যার ফল মিলেছে কলকাতা পুরসভা (KMC) সহ রাজ্যের অন্যান্য পুর নিগমগুলির ভোটের ফলাফলে।


নিয়োগ দুর্নীতির প্রতিবাদে এদিনের মঞ্চ থেকে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেন, ‘‘গণতন্ত্রের ওপর হামলা চালানো হচ্ছে সরকারি কায়দায়। যে কোনও গণতান্ত্রিক দেশে প্রতিবাদ করার অধিকার রয়েছে। আমাদের শপথ নিতে হবে, গণতন্ত্রকে হত্যা করতে দেব না।’’

সিজিও কমপ্লেক্সে বামেদের অভিযান বানচাল করার ছক কষা হয়েছিল বলে অভিযোগ করা হয়েছে। সেই কারণেই মিছিল ও সভা করার অনুমতি দেয় নি পুলিশ। বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেন, ‘‘সভা বানচাল করতে পুলিশের লোকেরা দৌরাত্ম্য করেছে।’’


তৃণমূল সরকারকে আক্রমণ করেছেন সূর্যকান্ত মিশ্রও। দুর্নীতির প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘‘দুর্নীতিগ্রস্তরা জেলে যাবেন। তৃণমূলের যাঁদের ধরা হয়েছে, তাঁদের ছেড়ে দিতে কতক্ষণ লাগবে জানি না। চোর ধরো, জেল ভরো করে শুধু হবে না। লুটের টাকা ফেরত দিতে হবে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘কে কখন তৃণমূলে, কে কখন বিজেপিতে, পার্থক্য করা যাবে না। সবাইকে একজোট হয়ে লড়তে হবে।’’ রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘকে (RSS) তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) “এত খারাপ নয়” মন্তব্য নিয়েও শুক্রবার সরব হন সূর্য। বলেন, ‘‘আরএসএস ওঁকে মা দুর্গা বলেছিল, আর উনি সার্টিফিকেট দিচ্ছেন।’’

গরু পাচার-কাণ্ডে ধৃত বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকে ‘বীরের সম্মান দিয়ে’ ফিরিয়ে আনার কথা বলেছেন মমতা। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম (Md Selim) এদিন বলেন, ‘‘বাংলার পুলিশ উলঙ্গ হয়ে গিয়েছে। ক্লাস টেনের দুজন ছাত্র অপহরণ হল। কোনও এমএলএ, কোনও এমপি বলেছে পুলিশের কাছে নিয়ে যাচ্ছি? বসিরহাটে লাস পাওয়া গেল। সিএম ঢং করে দেখান বিডিও আইসির সঙ্গে যোগাযোগ করছি। আসলে শুধু অনুব্রতর সঙ্গে যোগাযোগ।”


এ দিনের মিছিল নিয়ে সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, “এখন বামপন্থীরাই রাস্তায়। গত দশ-বারো বছর ধরে বামপন্থীরা ছাড়া কারা রয়েছেন রাস্তায়? তৃণমূল আর বিজেপি সরকার একমাত্র বামপন্থীদের ভয় পায়। এখনও ওদের জানা নেই কমিউনিস্টরা অন্য ধাতুতে গড়া। টের পাবে এবার।”


কী দাবিতে বামফ্রন্টের এদিনের মিছিল?
১) রঙ না দেখে ইডি-সিবিআই এর দুর্নীতির তদন্ত।
২) যাঁরা গ্রেফতার হয়েছেন দ্রুত তাঁদের শাস্তি।
৩) নিয়োগ কেলেঙ্কারিতে যাঁরা জড়িত তাঁদের গ্রেপ্তারি।
পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee), অনুব্রত মণ্ডলের (Anubrata Mondal) মতো শাসকদলের ‘প্রভাবশালী’ নেতাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কয়লা পাচার-কাণ্ডে তদন্তকারী সংস্থার মুখোমুখি হয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। বামেদের একাংশের মতে, বিজেপিকে রুখে বিরোধী মঞ্চে ধীরে ধীরে গুরুত্ব বাড়ছে বামপন্থীদের।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *