আজ খবর ডেস্ক:
কথায় বলে, বড় শহরে নাকি হাওয়ায় টাকা ওড়ে! এবার কি কলকাতাতেও (Kolkata) তাই ঘটছে?
ইনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ED) তল্লাশিতে শহরের একের পর এক জায়গা থেকে গত কয়েক মাসে উদ্ধার হয়েছে কোটি কোটি টাকা। শুধু কলকাতাই বা কেন, জেলা থেকেও কেন্দ্রীয় এজেন্সির হাতে এসেছে নগদ, স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি। কখনও মালিক রাজনৈতিক কোনও নেতা। কোথাও আবার নেহাতই সরকারি কর্মচারী অথবা ব্যবসায়ী।
শনিবার সকাল থেকে কলকাতার একাধিক এলাকায় তল্লাশিতে নেমেছে ইডি। পার্কস্ট্রিট (Park Street), মোমিনপুর (Mominpur) এবং গার্ডিনরিচের (Garden Reach) মত অভিজাত এলাকাগুলিতে তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছেন আধিকারিকরা।
জমি কেনাবেচা, নির্মাণশিল্পের আড়ালে কালো টাকা (Black Money) সাদা করার চক্র! প্রতারণার হাত থেকে রেহাই পাননি খোদ হাইকোর্টের বিচারপতিও। ইডি-র নজরে কলকাতার একাধিক ব্যবসায়ী।

ব্যবসায়ী অভিজিৎ সেন। ব্যবসায়ী নিসার খান সহ বিভিন্ন নাম উঠে আসছে। ইতিমধ্যেই হাজিরার নোটিশ দেওয়া হয়েছে পার্কস্ট্রিটের অভিযুক্ত ব্যবসায়ীকে।
সকাল থেকে তল্লাশি চলল কলকাতার একাধিক জায়গায়। উদ্ধার ল্যাপটপ, হার্ডডিক্স-সহ বহু গুরুত্বপূর্ণ নথি।
শনিবার সকাল থেকে দক্ষিণ ও মধ্য কলকাতার দেশপ্রিয় পার্ক, সাউথ সিটি (South City), যোধপুর পার্ক সহ একাধিক জায়গায় চলল অভিযান।
দেশপ্রিয় পার্কের অভিজাত কনস্ট্রাকশনের মালিক অভিজিৎ সেন।


নির্মাণশিল্প এবং ইন্টিরিয়র ডিজাইনিংয়ে কাজ করে তাঁর সংস্থা। জানা গিয়েছে, ২০১২ সাল থেকে অভিজিতের সংস্থা কাজ করছে, কিন্তু সূত্রের দাবি, আসলে বিতর্কিত সম্পত্তি কেনাবেচায় যুক্ত অভিজিত্‍। এমনকী এও জানা যাচ্ছে,
রাজ্যের একাধিক আমলার (Bureaucrat) কালো টাকা অভিজিতের মাধ্যমে সাদা করা হত, অভিযোগ ইডির।

এদিন সল্টলেকের CGO Complex থেকে ED আধিকারিকদের তিনটি আলাদা টিম এই অভিযানের জন্য বেরোয়। পার্ক স্ট্রিট থানার ৩৪-এ নম্বর ম্যাকলয়েড স্ট্রিটের একটি বহুতল আবাসনে হানা দেয় ED-র একটি দল। অন্যদিকে, আরও একটি ED টিম পৌঁছয় মোমিনপুরের ময়ূরভঞ্জ রোডে এক বস্ত্র ব্যবসায়ীর বাড়িতে। সেখান থেকে ব্যবসায়ীর এক আত্মীয়কে সঙ্গে নিয়ে ED টিম পৌঁছয় পাশেই বিন্দুবাসিনী স্ট্রিটের তাদের অন্য একটি বাড়িতে।
পার্ক স্ট্রিট, গার্ডেনরিচ এবং মোমিনপুরের এই তিনটি তল্লাশি অভিযানের মধ্যে কোনও যোগসূত্র রয়েছে কিনা, তা নিয়ে এখনও স্পষ্ট কিছু জানায়নি ED। মোমিনপুর এলাকা থেকে ইতিমধ্যেই ED আধিকারিকরা তল্লাশি শেষ করে বেরিয়ে গিয়েছেন।


শনিবার সকালেই ED-র একটি দল গার্ডেনরিচে পরিবহণ ব্যবসায়ী নিসার খানের বাড়িতে হানা দেয়। জানা গিয়েছে, সেখান থেকেই উদ্ধার হয়েছে বিপুল অঙ্কের টাকা। যা চোখ কপালে তোলার জন্য যথেষ্ট। ওই ব্যবসায়ীর খাটের তলায় প্ল্যাস্টিকের প্যাকেটে মোড়া ৫০০ টাকার একাধিক বান্ডিল উদ্ধার হয়েছে।
ইতিমধ্যেই টাকা গোনার মেশিন আনা হয়েছে। গোটা এলাকায় কেন্দ্রীয় বাহিনী (CRPF) দিয়ে মুড়ে ফেলা হয়েছে। CGO কমপ্লেক্সে থেকে রওনা দিয়েছে ইডির অতিরিক্ত টিম।

পরিবহণ ব্যবসায়ীর বাড়ি থেকে উদ্ধার এই টাকা কোনওভাবে কয়লা কিংবা গোরু পাচারকাণ্ডের (Coal/Cattle Smuggling Case) সঙ্গে জড়িত কিনা, তা নিয়ে মুখ খোলেননি ED আধিকারিকরা। গার্ডেনরিচের শাহি আস্তাবল গলিতে নিসার খানের বাড়ি ঘিরে ফেলা হয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়েছে।
এই পরিবহণ ব্যবসায়ী নিসার খানের খিদিরপুর সহ শহরের একাধিক অঞ্চলে অফিস রয়েছে। সেখানেও যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে ED আধিকারিকদের। ইতিমধ্যেই নিসার খানের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও কথা বলা হচ্ছে। উপস্থিত রয়েছেন মহিলা অফিসাররাও।


ইডি সূত্রে আরও খবর, আনসার আলি নামে এক ব্যক্তির ছেলে শাহরিয়ার আলির খোঁজে এই তল্লাশি চালানো হচ্ছে। তবে তিনি এ দিন বাড়িতে ছিলেন না। তাঁর বাবা-মাকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছেন তদন্তকারীরা। তিনি বিভিন্ন সময় বিদেশেও গিয়েছিলেন বলে সূত্রের খবর। জানা গিয়েছে, পেশায় কাপড় ব্যবসায়ী শাহরিয়ারের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে বিপুল অর্থ লেনদেনের হদিশ মিলেছে। সেই টাকার উৎস কোথায়? তারই সন্ধানে তল্লাশি চালাচ্ছে ইডি।
চলতি বছরের জুলাই মাসে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে (Partha Chatterjee) গ্রেপ্তার করেছে ইডি। তাঁর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের (Arpita Mukherjee) বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছিল বিপুল টাকা, গয়না ও কয়েক কোটি টাকার সম্পত্তির নথি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *