আজ খবর ডেস্ক:
উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের (NBU) রেকর্ড রুমের সামনে আগুন লেগেছিল চলতি সপ্তাহের সোমবার, গভীর রাতে। ছাত্র-অধ্যাপক মহলের একাংশের দাবি ছিল, জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে বহু গুরুত্ব পূর্ণ নথি। প্রসঙ্গত শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি কাণ্ডে (SSC Scam) সোমবারই গ্রেপ্তার করা হয়েছিল উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুবীরেশ ভট্টাচার্যকে (Subiresh Bhattacharya)। উপাচার্য গ্রেপ্তারের ১২ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই দুর্নীতির তথ্য প্রমাণ লোপাটের অভিযোগ উঠেছিল রাজ্যজুড়ে। সেদিন রাতেই কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court) বিচারপতিদের পর্যবেক্ষণে আসে উত্তরবঙ্গের এই ঘটনা।
সোমবার রাতের উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে “পরীক্ষা নিয়ামক বিভাগ” ভবনের পেছনে নথি ‘পোড়ানোর ঘটনায় তদন্ত শুরু করল পুলিশ।


এই প্রসঙ্গে উঠে এসেছে রীতিমত চাঞ্চল্যকর তথ্য। যা নিয়ে এদিন সকাল থেকেই অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ (ABVP) ধর্ণায় বসেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের সামনে। তাঁদের অভিযোগ, উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের কনফিডেন্সিয়াল দপ্তরের কিছু নথি পোড়ানো হয়েছে। নথি পোড়ানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল একটি বেসরকারি সংস্থাকে। তাদের কর্মীরাই নথি পুড়িয়েছেন।

সংবাদমাধ্যমের সামনে অনুপ জানা নামে এক ব্যক্তি দাবি করেন, বিভিন্ন সময় দপ্তরের কাজে ভুল হলে সেই নথি ছিঁড়ে ডাস্টবিনে ফেলা হয়। তার মধ্যে কোনও তালিকা বা মার্কশিটে ভুল থাকলে সেগুলি ফেলে দেওয়া হয়। সেই নথি পোড়ানো হয়েছে। ওয়াকিবহাল মহলের প্রশ্ন, উপাচার্য সুবীরেশের বিশ্ববিদ্যালয় এভাবেই কি দুর্নীতির যাবতীয় তথ্য প্রমাণ সরিয়ে ফেলা হতো?


মঙ্গলবার বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার সেই ভিডিও টুইট (Tweet) করেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই পাল্টা প্রশ্ন তোলেন, এই ভিডিও কবেকার? রাতে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকলেও নথি পোড়ানো হচ্ছে কেন? এর মধ্যে অন্য কোনও দুর্নীতির নথি নেই তো? এবার দেখার এব্যাপারে কোনও পদক্ষেপ করে কি না সিবিআই (CBI)!
সূত্রের খবর, সোমবার রাতেই কলকাতা হাইকোর্টের তরফে গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখার নির্দেশ যায় কেন্দ্রীয় এজেন্সির কাছে।

মঙ্গলবার মাটিগাড়া থানার পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে নিরাপত্তা বিভাগের দায়িত্বে থাকা আধিকারিক সুদাস লামার সঙ্গে কথা বলে। জিজ্ঞাসাবাদ করে। পরীক্ষা নিয়ামক দেবাশিস দত্ত ছুটিতে রয়েছেন জেনে তাঁর ফোন নম্বর নেয়।
নথি পুড়িয়ে ফেলার অভিযোগ সম্পর্কে ডিসিপি(পশ্চিম) কুনওয়ারভূষণ সিং বলেন, ‘‘ঘটনাটি তদন্ত করে রিপোর্ট দিতে মাটিগাড়া থানার পুলিশ আধিকারিককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রিপোর্ট দেখে, সেই মত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
এদিকে ভিডিও টুইট করে বিজেপির (BJP) রাজ্য সভাপতি লিখেছেন, “উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রাতের অন্ধকারে নথি জ্বালাতে দেখা যাচ্ছে কিছু ব্যাক্তিকে। এই নথি জ্বালানোর উদ্দেশ্য কী? কীসের তথ্য গোপন করতে কী কী নথি জ্বালিয়ে ফেলা হলো? উপস্থিত ব্যক্তিদের মধ্যে গ্রেপ্তার হওয়া উপাচার্যও নেই তো, প্রশ্নটা কিন্তু থেকেই যায়। ঘটনার তদন্ত দাবি করছি।”

উপাচার্যহীন বিশ্ববিদ্যালয়ে এমনিতেই কিছুটা অচলাবস্থা রয়েছে। আধিকারিকদের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা রয়েছে। যে কারণে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (UGC) সঙ্গে আর্থিক বরাদ্দ নিয়ে আলোচনার জন্য এ দিন দিল্লি যান ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার প্রণবকুমার ঘোষ।
ফলত, উপাচার্য সুবীরেশ ভট্টাচার্য গ্রেপ্তার হওয়ার পরে, অচলাবস্থা কাটাতে নতুন কাউকে উপাচার্যের দায়িত্ব দেওয়া হবে কি না, সে দিকে তাকিয়ে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া, কর্মী, আধিকারিকরা।
বুধবার উপাচার্যর পদত্যাগ ও শাস্তির দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেটের সামনে অবস্থান-বিক্ষোভ করে বিজেপি এবং তাদেরছাত্র ও যুব মোর্চা। উপাচার্যের ভূমিকা নিয়ে “নিন্দা” জানানোর পাশাপাশি এই বিক্ষোভ থেকে দাবি ওঠে, সোমবার রাতে নথি পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ক্যামেরা-বন্দি হয়েছে। কর্মীদের একাংশ মেনেছেন, তাঁরাই পুড়িয়েছেন। যদি তদন্তে অসহযোগিতা করা হয়, তা হলে যিনি বা যাঁরা নথি জ্বালিয়েছেন এবং স্বীকার করেছেন, তাঁদের গ্রেপ্তার করতে হবে।

এমনকী, এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee) যে পিএইচডি ডিগ্রি পেয়েছেন সেটি জালিয়াতি করে পাওয়া বলেও অভিযোগ তুলেছে বিজেপি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *