আজ খবর ডেস্ক:
ফের যোগী (Yogi Adityanath) রাজ্য শিরোনামে! এবার এক দলিত (Dalit) নাবালকের মৃত্যু।
সামাজ বিজ্ঞান (Social Science) পরীক্ষায় উত্তরপত্রে বানান ভুল লেখার অপরাধে উত্তরপ্রদেশে (Uttar Pradesh) এক ছাত্রকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠল এক উচ্চবর্ণের (Upper Caste) শিক্ষকের বিরুদ্ধে।
এই ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে তুমুল ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। উত্তেজনা থামাতে গিয়ে আক্রান্ত পুলিশ। পুলিশের গাড়িসহ বেশ কয়েকটি গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয় ক্ষিপ্ত জনতা। এমনকী, তাঁরা পাথর ছুঁড়তে থাকে পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে।
পরে ভীম আর্মি (Bhim Army) এবং সমাজবাদী পার্টির (SP) সমর্থকরাও বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে যোগ দেয়।

নিখিল ডোহরে

ঘটনাটি ঘটেছে উত্তরপ্রদেশের (Uttar Pradesh) ঔরাইয়া জেলার আছলদার আদর্শ ইন্টার কলেজে। নিহত ছাত্রের নাম নিখিল ডোহরে। ১৫ বছর বয়সি নিখিল ওই স্কুলের দশম শ্রেণির পড়ুয়া ছিল। জানা গেছে, গত ৭ই সেপ্টেম্বর ক্লাসে একটি পরীক্ষা নেন সমাজ বিজ্ঞানের শিক্ষক অশ্বিনী সিং। সেই পরীক্ষার মাল্টিপল চয়েজ প্রশ্ন (MCQ) ছিল, যার উত্তর দেওয়ার জন্য পড়ুয়াদের একটি করে ওএমআর শিট (OMR Sheet) দেওয়া হয়েছিল।
ক্লাসের অন্যান্য ছাত্রদের থেকে জানা যায়, সেই ওএমআর শিটে একটি প্রশ্নের জন্য ভুল করে দুটি উত্তর নির্বাচন করে ফেলেছিল নিখিল। তাছাড়া অন্য প্রশ্নের ক্ষেত্রে একটি শব্দের বানান ও ভুল লিখেছিল সে।
এরপরেই ওই পড়ুয়ার চুলের মুঠি ধরে টেনে এনে লাথি, ঘুষি মারতে শুরু করেন ওই শিক্ষক। এমনকি, লাঠি দিয়েও তাকে বেধড়ক মারধর করা হয়। এরপর ক্লাসের মধ্যেই অজ্ঞান হয়ে যায় ওই ছাত্র।

সোমবার সাইফাই মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই ছাত্রের মৃত্যু হয়। ইটাওয়া সদর দপ্তরে ময়নাতদন্তের (Post Mortem) পর মৃতদেহ গ্রামে পৌঁছলেই শোরগোল পড়ে যায়। রাত সোয়া ৯টা নাগাদ বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছুড়তে শুরু করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। থানায় পার্ক করা একটি পুলিশ জিপেও আগুন দেওয়া হয়েছে।
মৃত ছাত্র নিখিলের বাবা রাজু ডোহরে জানিয়েছেন, ৭ তারিখের ওই ঘটনার পর তাঁরা স্কুলে যান। কিন্তু অভিযুক্ত শিক্ষক উপস্থিত সকলের সামনে জাত তুলে গালাগাল দেন তাঁদের। স্কুল থেকে বেরিয়ে যেতে বলার পাশাপাশি হুমকিও দেওয়া হয় তাঁদের।
ছেলের মৃত্যুর পর হাসপাতালের মেডিক্যাল রিপোস্ট নিয়ে আছলদা থানায় অশ্বিনী সিংয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে ওই ছাত্রের পরিবার । পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়েছে। তাঁকে গ্রেফতার করার জন্য পুলিশের ৩টি দল গঠন করা হয়েছে।

দিন কয়েক আগেই উত্তরপ্রদেশে ২ দলিত নাবালিকা বোনের গণধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা ঘটেছে। যা নিয়ে সরগরম হয়ে উঠেছিল গোটা দেশ।
এবার দশম শ্রেণীর এক দলিত স্কুল ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে তীব্র চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে এলাকায়। অত্যন্ত ক্ষুব্ধ গ্রামের দলিত সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষজন।
নিখিলের বাবা রাজু পেশায় একজন কৃষক। তিনি জানিয়েছেন, এর আগে ওই স্কুলে একাধিকবার উচ্চবর্ণের পড়ুয়া ও শিক্ষকদের জাতিবিদ্বেষী মন্তব্যের শিকার হয়েছে নিখিল। অবস্থা এমনই, এরপর তাঁর বাকি দুই সন্তান রাঘব এবং অভিষেকককে পড়াশোনার করার জন্য স্কুলে পাঠাতে ভয় পাচ্ছেন তিনি।
এদিকে পরিস্থিতির অবনতি দেখে পুলিশ সুপার চারু নিগম ঘটনাস্থলে পৌঁছে ভিড় ছত্রভঙ্গ করে দেন এবং মৃতের পরিবারকে শান্ত করেন। একই সঙ্গে দুই ডজনের বেশি লোককে আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, সমাজবাদী পার্টির প্রধান ও রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ডঅখিলেশ যাদব (Akhilesh Yadav) বিষয়টি নিয়ে টুইট (Tweet) করে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

হিন্দিতে তিনি লেখেন, “শিক্ষকের মারধরের পর আউরাইয়ায় এক ছাত্রের মৃত্যুর খবর শুধু দুঃখজনকই নয়, অত্যন্ত সংবেদনশীলও। সরকারের উচিত যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া এবং নিহতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া। শিক্ষা জীবন দেয়, নেয় না”।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *