আজ খবর ডেস্ক : আপনি কি জানেন যে আপনার প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাস আপনার শরীরে হরমোনের ভারসাম্যকে প্রভাবিত করে? হরমোন হল শরীরের একপ্রকার রাসায়নিক বার্তাবাহক, যা শরীরকে সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ এবং টিস্যুতে প্রবাহিত করে।হরমোনগুলি নিঃসৃত হয় এন্ডোক্রাইন গ্রন্থি থেকে, যা শরীরের বিপাক ক্রিয়া থেকে শুরু করে বিকাশ , এমনকি প্রজনন পর্যন্তও নিয়ন্ত্রণ করে। তাই হরমোনের ভারসাম্যহীনতা সমগ্র শারীরিক প্রক্রিয়াকেই বিশেষ ভাবে প্রভাবিত করতে পারে। তাই দেহে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা নির্মূল করার মূল চাবিকাঠি হল ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টিকারী খাবারগুলিকে নিত্যদিনের ডায়েট থেকে বাদ দেওয়া। কিন্তু কোন কোন খাওয়ার এড়িয়ে চলবেন?

১.লাল মাংস (Red Meat) : প্রথমেই যেই খাবারটি দৈনন্দিন খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে সেটি হল, অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত লাল মাংস। কারণ হল লাল মাংস যেমন মাটন, শুয়োরের মাংস এবং গরুর মাংসে প্রচুর পরিমাণে স্যাচুরেটেড এবং হাইড্রোজেনেটেড ফ্যাট থাকে, যা অতিমাত্রায় অস্বাস্থ্যকর।এছাড়া অতিরিক্ত লাল মাংস খাওয়াতে শরীরে ইস্ট্রোজেনের ক্ষরণ বেড়ে যায় , তাতে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টির সম্ভাবনা থাকে। তাই লাল মাংসের পরিবর্তে মাছ , ডিম বা চর্বিহীন মাংস বিকল্প হিসেবে খাওয়া যেতে পারে , যার মধ্যে ওমেগা -৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে।

২. স্টেভিয়া (Stevia ) : আমাদের মতো বেশিরভাগ মানুষের মধ্যেই স্টেভিয়ার মতো কৃত্রিম মিষ্টি পানীয় খাওয়ার প্রবণতা থাকে। তবে স্টেভিয়ার মতো কৃত্রিম মিষ্টি গ্রহণ করার ফলে শরীরে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা বাড়াতে পারে।এমনকি মাসিক চক্রের উপরও বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।

৩. ক্রুসিফেরাস শাকসবজি (Cruciferous Vegetables) : সবজি স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো হলেও , সব সবজি স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো নয়। যেমন – ফুলকপি, ব্রোকলি এবং কলির মতো ক্রুসিফেরাস জাতীয় শাকসবজি অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে শরীরে প্রদাহ তৈরি হতে পারে। এছাড়া, এই ধরনের সবজি বেশি খেলে তা থাইরয়েড গ্রন্থিকে প্রভাবিত করতে পারে, যা পরে হরমোনের ভারসাম্যহীনতার অন্যতম কারণ হয়ে উঠতে পারে।

৪. প্রক্রিয়াজাত খাবার (Proccesed food) : প্যাকেটজাত বা এই ধরনের প্রক্রিয়াকৃত খাবার খাওয়ার সাথে হরমোনের ভারসাম্যহীনতার সরাসরি যোগ না থাকলেও, এটিও তার একটি অন্যতম প্রধান কারণ। কারণ এই খাবারগুলিতে চিনি, লবণ, প্রিজারভেটিভ থাকে এবং এগুলোর শরীরে গেলে, দেহে প্রদাহ তৈরি হতে পারে। যার থেকে স্ট্রেস ও স্থূলতার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

৫. ক্যাফিন (caffine) : অত্যধিক ক্যাফিন খাওয়া ঘুমের সাধারণ চক্রকে প্রভাবিত করে। তাছাড়া অতিরিক্ত ক্যাফিন শরীরে কর্টিসল উৎপাদন বাড়াতে পারে। কর্টিসলের মাত্রা দেহে বেড়ে গেলে, স্ট্রেস বেড়ে যায়। কারণ এই হরমোনটি তার সাথে যুক্ত। এটিও হরমোনের ভারসাম্যহীনতার একটি অন্যতম কারণ।

৬. দুগ্ধজাত দ্রব্য (Milk Products) : দুগ্ধজাত দ্রব্য পুষ্টিতে ভরপুর হওয়ায়, এই ধরনের খাওয়ার খাওয়া শরীরের জন্য ভালো। তবে আপনি যদি হরমোনের ভারসাম্যহীনতায় ভুগে থাকেন, তবে এটি খাওয়া কমাতে হবে বা প্রয়োজনে সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দিতে হবে। কারণ অতিরিক্ত দুগ্ধজাত খাবার অন্ত্রে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে, যা হরমোনের ভারসাম্যকে প্রভাবিত করতে পারে। আসলে, অতিরিক্ত পরিমাণে দুধ খেলে ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা বেড়ে যায়, যা শরীরে শর্করার মাত্রাকে প্রভাবিত করে।

৭. মিষ্টি, ক্যান্ডি ( Sweets and Candies): অত্যধিক ক্যান্ডি বা চিনি যুক্ত চকলেট, মিষ্টি খেলে দেহে শর্করার মাত্রা বাড়াতে পারে। শর্করা ইনসুলিনের মাত্রা বৃদ্ধি করে এবং একটি সময়ের পর বর্ধিত শর্করার পরিমাণ লেপটিন এবং ঘেরলিনের সংবেদনশীলতাকে রোধ করতে থাকে। এই হরমোন দুটিই ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণের সাথে যুক্ত। ফলত,শরীরের হরমোনের ভারসাম্যকে প্রভাবিত করে।

৮. সোয়া জাতীয় পণ্য (Soya Products) : মানুষ এখন আরও বেশি স্বাস্থ্য সচেতনতা হতে সোয়া জাতীয় পণ্য খাওয়ার দিকে ঝোঁক বাড়িয়েছে, কিন্তু এই জাতীয় খাওয়ার খুব বেশি খেলে, তা দেহে হরমোনের ভারসাম্যকে প্রভাবিত করতে পারে। কারণ সোয়াতে ফাইটোয়েস্ট্রোজেন নামক একটি জৈব পদার্থ থাকে, যা শরীরে ইস্ট্রোজেনের ক্ষরণ বাড়ায়। ফলে ডিম্বস্ফোটন চক্রকে প্রভাবিত হতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদে প্রজনন ক্ষমতাকে ( ovulation) প্রভাবিত করে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *