আজ খবর ডেস্ক:
দিন দিন দূষণ বাড়ছে। নিশ্বাসের সঙ্গে ফুসফুসে ঢুকছে বিষরূপী কার্বন-ডাই-অক্সাইড। যার বলি হতে হচ্ছে আট থেকে আশি, সকলকে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, উষ্ণায়ন ও দূষণের (Pollution) মূল কারণ কার্বন ডাই অক্সাইড (Carbon Dioxide) আর প্লাস্টিক (Plastic)।
এবার কেবলমাত্র সৌরশক্তির (Solar Energy) সাহায্যে কার্বন-ডাই-অক্সাইড ও প্লাস্টিক থেকে পুনর্ব্যবহারযোগ্য দুই উপাদান তৈরির পথ দেখাল কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের (Cambridge University) গবেষণা। আর আমাদের জন্য সব থেকে সুখের বিষয়, সেই গবেষণায় সামিল দুই বাঙালি, মতিয়ার রহমান ও শুভজিৎ ভট্টাচার্য। ৯ই জানুয়ারি ‘Nature’ পত্রিকার সাব জার্নাল ‘Nature Synthesis’-এ প্রকাশিত হয়েছে এই গবেষণা।

পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান (Kalna, Burdwan) জেলার কালনার কদম্বা গ্রামের বাসিন্দা, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের (Jadavpur University) প্রাক্তনী মতিয়ার জানাচ্ছেন, কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং সেন্ট জনস কলেজের ফেলো এরউইন রেইসনারের নেতৃত্বে ‘রেইসনার ল্যাব’-এ তাঁরা এই গবেষণা করেছেন। রেইসনার এই গবেষণাপত্রের মুখ্য প্রণেতা (Senior Author) এবং মতিয়ার ও শুভজিৎ যুগ্ম প্রথম প্রণেতা (Joint First Author)।
জানা গিয়েছে, এই গবেষণার মাধ্যমে একটি রিঅ্যাক্টর (Reactor) তৈরি করা হয়েছে যাতে সৌরশক্তির মাধ্যমে কার্বন-ডাই-অক্সাইড থেকে তৈরি হবে সিনগ্যাস। এটি মূলত তরল জ্বালানি তৈরিতে কাজে লাগে। প্লাস্টিকের বোতল থেকে তৈরি হবে গ্লাইকোলিক অ্যাসিড, যা প্রসাধন শিল্পে (Cosmetics Industry) ব্যবহৃত হয়। সৌরশক্তির সাহায্যে এর আগে প্লাস্টিক ও কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পুনর্ব্যবহার নিয়ে গবেষণা হয়েছে। তবে একসঙ্গে দুই ক্ষতিকারক উপাদানের পুনর্ব্যবহারের প্রযুক্তি এর আগে তৈরি আগে হয়নি, দাবি গবেষকদের।

মতিয়ার রহমান (বাম দিকে) ও শুভজিৎ ভট্টাচার্য

কেমব্রিজ থেকে প্রকাশিত বিবৃতিতে রেইসনার বলেছেন, ‘‘সৌরশক্তি ব্যবহার করে বর্জ্যকে কীভাবে আবার ব্যবহারযোগ্য করা যায় সেটাই ছিল আমাদের গবেষণার প্রধান উদ্দেশ্য। কারণ প্লাস্টিক দূষণ গোটা বিশ্বের সমস্যা। আমরা যে প্লাস্টিক ডাস্টবিনে ফেলি তা আসলে পৃথিবীর বুকে জমতেই থাকে।’’
এই জমে থাকা প্লাস্টিকের পাহাড়ই স্কুলজীবন থেকেই বানিয়েছিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের প্রাক্তনী মতিয়ারের মনে। তিনি বলছেন, ‘‘দৈনন্দিন যে সমস্যাগুলো অনুভব করতাম তা থেকেই এনভায়রনমেন্টাল কেমিস্ট্রি নিয়ে গবেষণার কথা ভাবি। মনে হত প্রতি বছরই যেন গরম আরও বেড়ে যাচ্ছে, নানা জায়গায় দেখতাম প্লাস্টিক ডাঁই হয়ে আছে। ভাবতাম, বিজ্ঞানের মাধ্যমেই এর সমাধান খোঁজা প্রয়োজন।’’


কালনার মহারাজা উচ্চ-বিদ্যালয়ের পর যাদবপুর থেকে রসায়নে স্নাতক। তারপর মাদ্রাজ আইআইটি থেকে এমএসসি করেন মতিয়ার। সুইৎজ়ারল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অফ বার্নে পিএইচডি করার পর কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পোস্ট-ডক্টরেট গবেষণায় যোগ দেন ‘মারি কুরি ফেলো’ হয়ে। এখন সেখানেই সিনিয়র সায়েন্টিস্ট হয়ে কর্মরত।

গবেষণায় মতিয়ারের সঙ্গী, শুভজিৎ ভট্টাচার্যের পড়াশোনা মেঘালয়ের শিলংয়ে। কলকাতার ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ থেকে ইন্টিগ্রেটেড স্নাতক-স্নাতকোত্তর পাঠের পর শুভজিৎ কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইডি করতে যান। তাঁর কথায়, ‘‘এই প্রযুক্তির সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হল একে বদলানোর সুযোগ। প্রয়োজন অনুযায়ী অনুঘটকের বদল ঘটিয়ে এর মাধ্যমে অন্য নানা উপাদান তৈরি করা সম্ভব।’’
গবেষকদের লক্ষ্য, আগামী পাঁচ বছরে এই প্রযুক্তিকে আরও উন্নত করা। এই প্রযুক্তির আরও বিকাশ ঘটিয়ে সৌরশক্তিচালিত রিসাইক্লিং প্ল্যান্ট তৈরি করা সম্ভব।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *