আজ খবর ডেস্ক:
শিশুর বয়স মাত্র কয়েক মাস তখন। শরীরের তুলনায় মাথার আকৃতি কিঞ্চিৎ অস্বাভাবিক। সন্দেহ হয় বাবা-মায়ের। বয়স যখন এক বছর, মাথা ফুলে ঢোল মেয়েটির। সঙ্গে অসহ্য যন্ত্রণা। চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে সামনে আসে কার্যত অপ্রাকৃতিক ঘটনা।
সিটি স্ক্যানে ধরা পড়ে, মেয়েটির ব্রেনের ভেতরে বেড়ে উঠছে আরও দুটি ভ্রূণ (Foetus in Brain)। তাদের হাত-পা, শরীরের গঠনও স্পষ্ট।

ঘটনাটি চিনের (China)। আমেরিকান অ্যাকাডেমি অব নিউরোলজি জার্নালে (American Academy of Neurology’s journal) সম্প্রতি এই খবর ছাপা হয়েছে।
হুয়াসান হাসপাতালের ডাক্তার জংজে লি শিশুটির সার্জারি করে মগজ থেকে দুটি যমজ ভ্রূণ বের করে মেয়েটির প্রাণ বাঁচিয়েছেন।
খবর প্রকাশ্যে আসতেই নড়েচড়ে বসেন গবেষক, বিজ্ঞানীরা। তথ্য বলছে, পৃথিবীর মাত্র ২০০ জনের ক্ষেত্রে এমন ঘটনা ঘটেছে। চিকিৎসার পরিভাষায় এই অবস্থাকে বলে ফিটাস ইন ফিটু (foetus in fetu)। অর্থাৎ শিশুর শরীরে ভ্রূণের উপস্থিতি। এই বিরল রোগ পাঁচ লক্ষ শিশুর মধ্যে এক জনের হয়। মায়ের গর্ভে থাকার সময়েই একটি ভ্রূণ অন্যটির মধ্যে ঢুকে পড়ে। সাধারণত অপরিণত ভ্রূণ তুলনায় পরিণত হতে থাকা ভ্রূণের শরীরের ভেতরে প্রবেশ করে। সেটি পরিণত ভ্রূণের শরীরের যে কোনও জায়গায় ঢুকে বাড়তে থাকে। সেটা মস্তিষ্ক হতে পারে অথবা পেট, হাড় বা শরীরের কোনও গ্রন্থিও হতে পারে।

এর আগে ২০২১ সালে ভারতের বিহারে এমন একটি ঘটনা নজরে পড়েছিল চিকিৎসকদের। তাঁদের মতে, মায়ের গর্ভে যমজ ভ্রূণ তৈরি হলে এমন ব্যতিক্রমী পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। ১৮০৭ সালে জর্জ উইলিয়াম ইয়াং প্রথম এমন একজন রোগীর বিস্তারিত কেস রিপোর্ট সামনে আনেন। 
ফিটাস ইন ফিটু মূলত মনোজাইগোটিক যমজ তৈরির পদ্ধতির ফলে হয়। যদি মনোকোরিওনিক যমজ হয় তাহলে জাইগোটের বিভাজনের সময় এমন অঘটন ঘটতে পারে।

সেক্ষেত্রে স্টেম কোষের (stem cell) অসম বিভাজনের কারণে একটি ভ্রূণ বড় ও অন্যটি তুলনামূলকভাবে ছোট হয়। তুলনামূলক বড় ভ্রূণটি মায়ের গর্ভ থেকে পর্যাপ্ত রক্ত, পুষ্টিরস পেয়ে স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠে। ছোট ভ্রূণটি তেমন রক্ত সরবরাহ না পাওয়ায় তুলনামূলকভাবে ছোট হয়। সেই ভ্রূণের মৃত্যু হয় অথবা সেটি অন্য ভ্রূণটির ভেতরে ঢুকে গিয়ে পুষ্টিরস নিতে শুরু করে। তখন বড় ভ্রূণের ভেতরে ছোট ভ্রূণটি বাড়তে শুরু করে। বড় ভ্রূণটি ধীরে ধীরে পরিণত হয়। একসময় ভূমিষ্ঠ হয়। কিন্তু তার শরীরের ভেতরেই বাড়তে থাকে সেই অপরিণত ভ্রূণটি।

সময়মতো সনাক্ত করে বিচ্ছিন্ন করা না হলে শিশুর শরীরে তা একসময় টিউমারে পরিণত হতে পারে। তার থেকে মারণ রোগ হতে পারে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *