আজ খবর ডেস্ক : বিশ্ব জুড়ে বিগত কিছু সময় ধরে বেড়েছে করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার । যে ভাবে এই হার বেড়েছে তাতে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা খেয়াল করে দেখেছেন যে, এই সংক্রমিতদের মধ্যে করোনা থেকে সেরে ওঠার পরও অনেক সময় জ্বর-কাশির মত উপসর্গগুলি দেখা যাচ্ছে। একে পোস্ট কোভিড সিম্পটম বলা হয়।
কিন্তু কিছু কিছু রোগীর ক্ষেত্রে ব্রেন ফগ নামক একটি বিশেষ রোগের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে । যা নিয়ে এই মুহূর্তে যথেষ্ট চিন্তিত চিকিৎসক মহল।যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য নির্দেশিকা অনুযায়ী কেউ যদি করোনাভাইরাস সংক্রমিত হন, তা গুরুতর বা মৃদু , তারপর ১২ সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও রোগীর দেহে এমন অসুস্থতার লক্ষণ রয়ে যায়। কিন্তু তার সঠিক কোনো কারণ চিকিৎসকেরা এখনও খুঁজে বের করতে পারেননি। তাই আপাতত একে ‘লং কোভিড’ ফেজ বলে ধরে নেওয়া হয়েছে।ব্রিটেনের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবার তথ্য অনুযায়ী, এই লং কোভিডের অন্যতম একটা লক্ষণ- স্মৃতি শক্তি বা মনঃসংযোগের সমস্যা, যাকে ”ব্রেন ফগ” বা বোধশক্তি ঝাপসা হয়ে যাওয়া বলা হয়।
ব্রেন ফগ কী?
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের নিউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক বাহাদুর আলী মিয়া বিবিসিকে বলেন, করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হলে রোগীর শরীরে রক্ত জমাট বাঁধার একটা প্রবণতা তৈরি হয়।তিনি বলেন “রক্তে যখন অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায় তখন ব্রেনেও অক্সিজেনের সরবরাহ কমে যায়। এতে করে ব্রেন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মেডিকেল সায়েন্সে এটাকে বলে ”হাইপ্রোসিক ইনজুরি”।”ব্রেন স্ট্রোক হলে বা টিউমার হলে ব্রেনের একটা অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু যখন হাইপ্রোসিক ইনজুরি হয় তখন সমস্ত ব্রেন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই অবস্থাকে বলা হচ্ছে ব্রেন ফগ,” বলেন অধ্যাপক বাহাদুর আলী মিয়া।
এই রোগের লক্ষন গুলি কি কি ?
ব্রেন ফগ হলে সাধারণত যে লক্ষণগুলি দেখা যায় সেগুলি হল – স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়া, বিষণ্ণতা, আচরণের পরিবর্তন, হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে যাওয়া।বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়া বা ব্রেন ফগ নিয়ে এখনও পর্যন্ত বিস্তর গবেষণা চলছে। তাই এখনও পর্যন্ত এই রোগের চিকিৎসার জন্য কোন নির্দিষ্ট গাইডলাইন তৈরি করা সম্ভব হয়নি।
প্রতিকার কি?
অধ্যাপক বাহাদুর আলী মিয়া অবশ্য জানিয়েছেন, এই ক্ষেত্রে অবশ্যই নিউরোলজি বা স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।তিনি বলেন “এক্ষেত্রে চিকিৎসক তাকে কিছু ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দেবেন। সঙ্গে সঙ্গে পুষ্টিকর খাবার খাওয়া ,ব্যায়াম করা, মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করা বাড়িয়ে দিতে হবে। এছাড়া কাউন্সেলিং এবং চিকিৎসকের পর্যবেক্ষণে থাকা খুব গুরুত্বপূর্ণ,”।বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ব্রেন ফ্রগ বিষয়টা নির্ভর করে কার মস্তিষ্ক এই রোগে কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার উপর। তাই কতদিনে সেরে উঠবে সেটাও তার উপরই নির্ভর করবে।