আজ খবর ডেস্ক- গড়িয়াহাট জোড়া খুন কাণ্ডের কিনারা করলো পুলিশ।গড়িয়াহাটের কাঁকুলিয়া রোডে কর্পোরেট-কর্তা সুবীর চাকী এবং তাঁর গাড়িচালক রবীন মণ্ডলকে খুনের পরেই অভিযুক্ত ভিকি হালদার এবং তার সঙ্গী শুভঙ্কর মণ্ডল মুম্বাইয়ে তাদের পরিচিতদের কাছে পালিয়ে যায়। সেখান থেকে ভিকি নিজের এক আত্মীয়কে ফোন করতেই , পুলিশ তার অবস্থান চিহ্নিত করে ফেলে। তারপরই শনিবার রাতে মুম্বইয়ের পারেল ইস্টের সেন্ট জেভিয়ার্স স্ট্রিটে একটি নির্মীয়মাণ বহুতলের পার্কিং লট থেকে ভিকি ও শুভঙ্করকে গ্রেফতার করা হয়।

পুলিশ জানায়, ট্রানজিট রিমান্ডে ভিকি-শুভঙ্করকে মঙ্গলবার সকালে ট্রেনে মুম্বই থেকে কলকাতায় এনে আলিপুর আদালতের মুখ্য বিচার বিভাগীয় বিচারকের এজলাসে তোলা হয়। তাদের ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক সুব্রত মুখোপাধ্যায়। সরকারি আইনজীবী সৌরীন ঘোষাল আদালতে বলেন, ‘‘ওই দু’জন পরিকল্পিত ভাবে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে বেপাত্তা হয়ে গিয়েছিল। তাদের জেরা করে জোড়া খুনে ব্যবহৃত মূল অস্ত্র উদ্ধার করতে হবে। খুনের ঘটনার পুনর্গঠনও জরুরি। তাই তাদের পুলিশি হেফাজতে নেওয়া দরকার।’’

পুলিশি সূত্রের খবর, খুনের পরে সুবীরবাবু ও রবীনবাবুর আঙুল থেকে সোনা ও রুপোর আংটি খুলে নেয় ভিকি এবং তার সঙ্গী। তদন্তকারীদের দাবি, তার ঠিক পরের দিনই সকালে ডায়মন্ড হারবারে গিয়ে, ওই আংটি দু’টি এক ব্যক্তির কাছে বন্দক রেখে তারা পাঁচ হাজার টাকা নেয় তারা।পুলিশের অনুমান, সেই টাকা দিয়েই ট্রেনের টিকিট কেটে মুম্বই রওনা দেয় দুই অভিযুক্ত। ভিকি এর আগেও বেশ কিছু দিন মুম্বইয়ে কাজ করেছিল বলে জানা গিয়েছে। ডায়মন্ড হারবারের কিছু যুবক মুম্বইয়ে কাজ করেন। তাদের সঙ্গে পরিচয় ছিল ভিকির। তাই বাণিজ্যনগরীতে পৌঁছে ভিকি প্রথমেই তাঁদের কাছে যায়। কিন্তু জোড়া খুনের খবর টিভিতে দেখার পরে তাঁরাও ভিকি ও তার সঙ্গীকে আশ্রয় দিতে অস্বীকার করেন। শেষ পর্যন্ত অন্য পরিচিতদের সাহায্যে নির্মীয়মাণ বহুতলে নিরাপত্তারক্ষীর কাজ জোগাড় করে ভিকি-শুভঙ্কর।

ঘটনায় মূল অভিযুক্ত ভিকি হালদার পুলিশি জেরায় জানায়, মা মিঠু হালদারের প্ররোচনায় এই খুন করেছিল সে। তার মাই তার হাতে খুনের জন্য ধারালো অস্ত্র তুলে দিয়েছিল বলেও জানায় ভিকি। বিষয়টি নিশ্চিত করতে মা মিঠু হালদার ও ছেলে ভিকিকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরাও করা হয়। ইতিমধ্যেই ঘটনার পুনর্নির্মাণের প্রয়োজন রয়েছে বলেও আদালত তরফ থেকে সরকারি আইনজীবী জানিয়েছেন।

ঘটনার আরেক অভিযুক্ত, ভিকির সঙ্গী শুভঙ্কর জানায়, সে এক যুবতীর প্রেমে পড়েছিল। ওই যুবতীকে বিয়ে করে ঘর বাঁধার জন্যই ভিকির সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল সে। কারণ এই বিয়ের জন্য টাকার প্রয়োজন ছিল। সেই টাকা ভিকি দেবে বলেছিল। রোজগার না থাকায় বাধ্য হয়ে এই খুনে ভিকির মদত দিচ্ছিল সে। ভিকি পুরো বিষয়টি জানত বলেই শুভঙ্করকে নাকি সে ব্ল্যাকমেলও করেছিল, এমনটাই দাবি অভিযুক্তের।

জেরায় ভিকি পুলিশকে আরও জানিয়েছে, সুবীরবাবুর কাছে অনেক টাকাপত্র, গয়না আছে ভেবেই তার মা মিঠু সেপ্টেম্বর মাসে ডাকাতির ছক কষেছিল। কিন্তু তা বাস্তবায়িত না হয়নি। তাই পরে খুনের ছক কষা হয়।
এই খুনের ছক কষার পর থেকেই তাদের সমস্ত পরিকল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছিল বলে জেরায় স্বীকার করে নেয় ভিকি। সেই মতো লোকজন জোগাড় করাও শুরু করে দেয় সে । কাদের কত টাকা দেওয়া হবে, কিভাবে খুন করা হবে, খুনের পর কে কোথায় গা ঢাকা দেবে , সব কিছুই ঠিক করা ছিল। সেই পরিকল্পনা মতোই এগোচ্ছিল কাজ, কিন্তু শেষরক্ষা হলনা। মুম্বই থেকে গ্রেফতার করা হল ভিকি হালদার এবং শুভঙ্করকে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *