আজ খবর ডেস্ক : সুপ্রিম কোর্টের একাধিক নিষেধাজ্ঞা, দেশজুড়ে পর্ন সাইট বন্ধ করে দেওয়ার মতো পদক্ষেপের পরও শিশু পর্নোগ্রাফির ওপর লাগাম টানতে পারছে না প্রশাসন। দেশজুড়ে বিভিন্ন প্রান্তে রমরমিয়ে চলছে শিশুদের নিয়ে নীল ছবির ব্যবসা। সম্প্রতি দেশজুড়ে তল্লাশি চালিয়ে চাইল্ড পর্নোগ্রাফির বিষয় চাঞ্চল্যকর তথ্য তুলে ধরল সিবিআই। জানানো হয়েছে শুধু এই দেশেই নয় দেশের বাইরেও পাকিস্তান , বাংলাদেশ , কানাডা, আমেরিকা, শ্রীলঙ্কা, নাইজেরিয়া মালয়েশিয়া, ইয়েমেনের মতো একাধিক দেশে ছড়িয়ে পড়ছে শিশুদের যৌন নির্যাতনের অপ্রীতিকর সমস্ত ভিডিও এবং ছবি।সিবিআই এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দেশ ও দেশের বাইরে সব মিলিয়ে প্রায় ৫০ টি চক্র শিশুদের নিয়ে এই ধরনের নীল ছবির ব্যবসা চালাচ্ছে।

ইতিমধ্যেই দেশের ১৪ টি রাজ্যের ৭৭ টি জায়গায় তল্লাশি চালিয়ে ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তদন্তকারীদের দাবি মূলত হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ টেলিগ্রাম ও ফেসবুকের মাধ্যমে এই ধরনের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ছে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্তরে। দেশজুড়ে পর্নোগ্রাফির ওয়েবসাইট গুলি বন্ধ করে দেওয়ায় সফটওয়্যার অ্যাপ্লিকেশন এর মাধ্যমে চলছে এই ধরনের ছবি ও ভিডিও আপলোডের কাজ। শিশুদের ওপর যৌন নিপীড়ন, অত্যাচার, ধর্ষণের ছবি ও ভিডিও , ‘চাইল্ড সেক্সুয়াল এবিউস মেটেরিয়াল’ হিসেবে আপলোড করা হচ্ছে অনলাইনে।ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো (NCRB) একটি সমীক্ষা করে বলেছে, প্রতিদিন ১০৯ জন শিশু যৌন হেনস্তার শিকার হয় আমাদের দেশে। তত্ত্বের রিপোর্টে এমন কিছু বিষয় তুলে ধরা হয়েছে যা শুনলে রীতিমতো শিউরে উঠতে হয়। বলা হয়েছে, ২০০৮ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে ১০ বছরের শিশুদের উপর যৌন নির্যাতনের ঘটনা প্রায় ৬ গুণ বেড়ে গিয়েছে। ২০১৮ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ৭৮১ টি এ ধরনের মামলা রজু করা হয়েছিল পকসো আইনে। তারপর করোনার কারণে দীর্ঘদিন লকডাউনে এই ধরনের অপরাধমূলক কাজের পরিমাণ আরও বেড়েছে।

প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি, শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ, যৌন হেনস্তার বিষয় কড়া পদক্ষেপ নিতে ও অপরাধীদের যোগ্য শাস্তি দিতে রাজ্যসভায় ইতিমধ্যেই পাস হয়েছে পকসো সংশোধনী বিল। শিশু যৌন নির্যাতন প্রতিরোধ আইন ২০১২ অনুযায়ী, ১২ বছরের কম বয়সী শিশুদের ওপর যৌন নির্যাতনের ঘটনা ঘটলে অপরাধীদের সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও কমপক্ষে ৭ বছরের সাজা হতে পারে। সেখানে আরও বলা হয়, শিশুদের উপর যৌন নির্যাতনের দোষী সাব্যস্ত হলে কমপক্ষে কুড়ি বছরের কারাদন্ডে দন্ডিত করা হবে অপরাধীকে ও সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড। এছাড়া ওই বিলে শিশু পর্নোগ্রাফি রোখার জন্য একটি সংস্থানও রাখা হয়।

এরপর, সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের তরফ থেকে ‘ত্বকের স্পর্শ’ বিষয়টিকে নিয়ে একটি নতুন রায় দেওয়া হল। ত্বকের স্পর্শ না হলে শিশুদের ওপর যৌন নিগ্রহের অভিযোগ দায়ের করা যাবে না, বোম্বে হাইকোর্টের এই রায়, খারিজ করে দিল সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালতে তিন বিচারপতির বেঞ্চ-এর তরফ থেকে জানানো হল, যৌন নিগ্রহের উদ্দেশ্য ছিল কিনা সেটাই মূল বিবেচনার বিষয়। সেখানে ত্বকের স্পর্শ না হলে পকসো আইন লাগু হবে না, এই ব্যাখ্যাকে মানতে চাইল না সুপ্রিম কোর্ট।শিশুদের ক্ষেত্রে যতক্ষণ না পর্যন্ত শরীর স্পর্শ করা হবে ততক্ষণ সেটাকে যৌন নির্যাতন বলা যাবে না; এবং ১২ বছর বা তার কম বয়সী শিশুদের পোশাকের উপর দিয়ে কোন রকম স্পর্শ বা হেনস্তা করা হলে তার যৌন নির্যাতন হিসেবে বিবেচিত হবে না বলে কিছুদিন আগে একটি মামলার শুনানিতে পকসো আইনের উল্লেখ করে রায় দেয় বোম্বে হাইকোর্টের নাগপুর বেঞ্চ।

এরপর সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিমকোর্টের দ্বারস্থ হয় জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের সদস্যরা। চলতি বছরের জানুয়ারিতে সেই রায়ের ওপর স্থগিতাদেশ জারি করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। তারপরই, আজ সুপ্রিম কোর্টের তরফ থেকে জানানো হয়, শিশুর গায়ে স্পর্শ হোক বা না হোক অপরাধ বিচার করা হবে অপরাধীর অভিপ্রায় কি ছিল তার ওপর ভিত্তি করে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *