আজ খবর ডেস্ক- এদিন বিকাশভবনে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর সঙ্গে শিক্ষক ঐক্য মুক্ত মঞ্চের সম্পাদক মইদুল ইসলাম এবং বিষ পানকারী ৫ শিক্ষিকা বৈঠক করলেন। অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে শিক্ষক ঐক্য মুক্ত মঞ্চের রাজ্য সম্পাদক মইদুল ইসলাম-সহ কমিটির ৩০০ জন সদস্য জোড়াফুলের পতাকা ধরেন আগেই। এবার জাতীয় শিক্ষা নীতির প্রতিবাদে সরব হবেন বলে জানালেন তাঁরা।

শিক্ষামন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল। অভিযোগ ছিল রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে। হাইকোর্টে মামলা ও করেছিলেন এই শিক্ষকরা। তারপরেই রাতারাতি তৃণমূলে যোগদান। ঝাঁকে ঝাঁকে সমালোচনা ধেয়ে এলেও আপাতত গুরুত্ব দিতে নারাজ এই নেতারা। এদিন ব্রাত্য বসুর সঙ্গে দুপুর তিনটে নাগাদ বৈঠক হয় তাঁদের।
এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মইদুল ইসলাম। পাশাপাশি, যে ৫ শিক্ষিকা বিষ খেয়েছিলেন তাঁরাও বৈঠক করলেন শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে। তাঁদের দাবি, কেন্দ্রীয় শিক্ষানীতিতে যে অন্যায় চলছে তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে নামতে চান তাঁরা।

এই সংগঠনের সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর বৈঠকের পর শিক্ষামন্ত্রী জানান, বেশ কিছু ইতিবাচক বিষয় নিয়ে কথাবার্তা হয়েছে তাঁদের মধ্যে। পুরসভার শিক্ষক-শিক্ষিকাদের যে সমস্যা রয়ে গিয়েছে সেই বিষয়ে দ্রুত সমস্যার সমাধান করা হবে বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী। পাশাপাশি তিনি এও বলেন,পার্শ্ব শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বদলি নীতি নিয়ে আলোচনা করা হবে আগামী দিনে। এছাড়াও যাবতীয় অবসরকালীন সুযোগ সুবিধা এবং ভাতার ব্যাপারে রাজ্য সরকার সবরকম সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। অবসরকালীন তিন লক্ষ টাকা দেওয়া হবে তাঁদের। হাইকোর্টে যে মামলা করা হয়েছে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের তরফে সেগুলিও তাঁরা প্রত্যাহার করে নেবেন বলে জানিয়েছেন এই বৈঠকে। শিক্ষকদের পক্ষে এই মামলা করেছিলেন সিপিএম সাংসদ ও আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য।

ব্রাত্য বসুর শেয়ার করা ফেসবুক পোস্ট

প্রসঙ্গত, কলকাতা বা দক্ষিণ ২৪ পরগণার শিশু শিক্ষিকা কেন্দ্র থেকে উত্তরবঙ্গে বদলি করে দেওয়ার জন্য প্রতিবাদে নেমেছিলেন ওই শিক্ষকরা। এরপর কোনও লাভ না হওয়ায় মইদুল ইসলামের নেতৃত্বে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে তাঁরা অনশন শুরু করেন বিকাশ ভবনের সামনে। এরপর মইদুল ইসলামকে বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এই ঘটনার জেরে তীব্র নিন্দা করেছিল বেশ কিছু রাজনৈতিক দল। এরপরই মইদুলের রাজনীতিতে যোগদান নিয়ে জল্পনা শুরু হয়, অবশেষে সেই জল্পনা উড়িয়ে তৃণমূলের হাত ধরেন মইদুল ইসলাম।

কেন্দ্রীয় শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে এবং বামের বিরুদ্ধে একাধিক মন্তব্যে সরব হন মইদুল। তিনি বলেন, সাত বছরের সংগ্রাম এবং লড়াইকে স্বীকৃতি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি তিনি এও বলেন, বামফ্রন্টের পুরনো নীতি এবং আদর্শকে সামনে রেখে তাঁরা এখনও লড়াই করার চেষ্টা করছেন। কাচের ঘরে বসে বাইরের সমস্যা বোঝা যায় না। তিনি আরও বলেন, নিজেদের ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নেওয়ার চেষ্টা করে না বাম সংগঠনগুলি। ‘মেহনতী’ মানুষের স্বার্থে কেন্দ্রীয় নীতির বিরোধিতা করে কেন্দ্রীয় সরকারকে পরিবর্তন করতে পারবে কি বামেরা? সেই বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন মইদুল। একই সঙ্গে তিনি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভবিষ্যতের একজন আইকন হিসেবেও আখ্যা দেন। পাশাপাশি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিভিন্ন প্রকল্পের কথা তুলে তাঁর ভূয়শী প্রশংসা করেন তিনি।

ক্ষমতার লোভের জন্য কংগ্রেসের হাত ধরতে রাজি হয়েছে বাম বলে দাবি করেন মইদুল। তিনি জানান, ভবিষ্যতে সাধারণ মানুষের স্বার্থে লড়ার জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত শক্ত করতে যোগদান করেছেন তৃণমূলে। মইদুল আগেই বিজেপিকে বিধেছেন। কেন্দ্রীয় সংস্থার সাহায্য নিয়ে বিজেপি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রতিহত করতে পারবে না। পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি জয়ী হবেন সেই বিষয়েও আশা প্রকাশ করেন মইদুল।

কখনও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির পিছনে আদি গঙ্গা পেরিয়ে আবেদন জানাতে যাওয়ার মতন ঘটনা আবার কখনও বিকাশ ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে প্রকাশ্যে বিষ খাওয়া। একাধিকবার রাজ্য সরকারের বিরোধিতা করতে দেখা গিয়েছে এই সংগঠনকে। তবে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান এবং একইসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে আগামী দিনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলে নিজেদের এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *