আজ খবর ডেস্ক : দেশজুড়ে কর্ম সংস্থানের বেহাল দশার কথা কারোরই অজানা নয়। বিশেষত শহর কলকাতায় নাগরিকদের চাকরি প্রদান এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির প্রশ্নে কার্যত অচল অবস্থা শহরতলীর। সরকারও যে তাঁর লক্ষ্যপূরণে সম্পূর্ণ ব্যর্থ – এমন দাবিও উঠছে লাগাতার। তবে শুধু কলকাতা নয়- দেশের সমস্ত বড় শহরগুলিরই এই মুহূর্তে একই দশা। তবে এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম একমাত্র বেঙ্গালুরু। সম্প্রতি নীতি আয়োগের রিপোর্টে অন্তত তেমনটাই দাবি করা হয়েছে।দেশের ৫৬ টি শহর জুড়ে সম্প্রতি এই সমীক্ষাটি চালিয়েছিল নীতি আয়োগ। এবার সেই সমীক্ষার রিপোর্ট প্রকাশ্যে এসেছে। তাতে দাবি করা হয়েছে, দেশের সমস্ত বড় শহরগুলি (বিশেষত চার মহানগরী) চাকরির সুযোগ তৈরি করার ক্ষেত্রে ও নাগরিকদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি প্রদানে বিগত কিছু সময়ে অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছে। রিপোর্টে উঠে আসা তথ্য অনুযায়ী বেঙ্গালুরু বাদে আর কোনও শহরই তাঁদের কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেনি। ১০০ এর মধ্যে বেঙ্গালুরুর স্কোর ৭৯। আর কলকাতার স্কোর বোর্ড কি বলছে?

নাম্বারিং এর হিসেবে কলকাতা ১০০ মধ্যে পেয়েছে মাত্র ৩।তবে শুধু কলকাতাই নয়, হতাশাজনক ফলের তালিকায় রয়েছে দেশের অর্থনৈতিক রাজধানী মুম্বইও। ১০০ এর মধ্যে বাণিজ্য নগরীর অর্জিত পয়েন্ট মাত্র ১৭। বিহারের রাজধানী পাটনার স্কোরও মুম্বইয়ের মত। তবে তুলনামূলক ভাবে ভালো দেশের রাজধানী দিল্লির স্কোর। দিল্লির ঝুলিতে এসেছে ৪৩ পয়েন্ট। তবে দাক্ষিণাত্যের আরেক মহানগরী চেন্নাইয়ের কপালে জুটেছে মাত্র ৩৬ পয়েন্ট। তাই সামগ্রিক ভাবে দেখতে গেলে চাকরি প্রদান ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির বিষয় চার মহানগরীর পারফরম্যান্সই বেশ হতাশাজনক। যদিও কিছুটা মুখ রক্ষা করেছে দিল্লি ও চেন্নাই। তবে এই দুই শহর সহ হায়দ্রাবাদকে রাখা হয়েছে অ্যাসপির‍্যান্ট ক্যাটেগরিতে। বেঙ্গালুরুর পর যে শহরগুলির তুলনামূলক ভাবে ভালো জায়গায় রয়েছে, তাদের মধ্যে অন্যতম হল ছত্তিশগড়ের রাজধানীর রায়পুর৷ এই তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে।উত্তরাখণ্ডের দেরাদুন ৫৯ পয়েন্ট নিয়ে তালিকায় তৃতীয় স্থান অধিকার করেছে।

এছাড়া চতুর্থ গোয়ার পানাজি। যদিও কোনওভাবেই এই রাজ্যগুলির বা তার রাজধানী শহরগুলির পারফরম্যান্সকে সেই ভাবে ভালো বলা চলে না। তার কারণ প্রতিটি শহরের পয়েন্টই রয়েছে কাঙ্খিত লক্ষ্যমাত্রার নিচে।২০১৫ সালে আন্তর্জাতিক জাতিপুঞ্জের বা United Nations – এর তরফ থেকে ১৭ এসডিজি নামক একটি পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। তার মূল উদ্দেশ্য ছিল, বিশ্বের দারিদ্র‍্য দূরীকরণ৷ সেইজাতিপুঞ্জের সেই ১৭ এসডিজি পরিকল্পনা মাফিকই সমীক্ষাটি চালিয়েছিল নীতি আয়োগ। সমীক্ষাটি ১৭ টি Sustainable Development Goals বা SDG এর অন্তত আটটি , সুঠাম অর্থনৈতিক কাঠামো ও চাকরি প্রদানের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়। নীতি আয়োগের সেই সমীক্ষায় দেখা যায় , কোভিড অতিমারির পরবর্তী পরিস্থিতিত কার্যত ধুঁকছে দেশ। ৫৬ টি শহরের মধ্যে মাত্র ১৩ টি শহর ৫০ এর উপর স্কোর করতে পেরেছে। বাকিদের অবস্থা খুবই শোচনীয়।

সার্বিকভাবে ১৭ টি এসডিজি মিলিয়ে দেশের Sustainable Development ধরে রাখায় শীর্ষ স্থান অধিকার করেছে হিমাচল প্রদেশের রাজধানী সিমলা। সংগৃহীত পয়েন্ট ৭৬। তার চেয়ে তিন পয়েন্ট পিছিয়ে তামিলনাড়ুর কোয়েম্বাত্তুর। তবে এক্ষেত্রে বিশেষ চমক কেরালার। প্রথম পাঁচের মধ্যে তিনে রয়েছে ত্রিবান্দ্রম এবং পাঁচে রয়েছে কোচি।তবে অবস্থা তলানিতে থেকেছে ঝাড়খণ্ডের ধানবাদের। উত্তরপ্রদেশের মেরঠ এবং অসমের গুহায়াটির অবস্থাও বেশ মন্দ। ৫৬ টি শহরের মধ্যে একেবারে নিচের দিকে তাদের অবস্থান। কিন্তু কলকাতা কি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে এই জায়গা থেকে? সেটাই এখন সবথেকে বড়ো দুশ্চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *