আজ খবর ডেস্ক- কলকাতার দরজায় কড়া নাড়ছে পুরভোট। দিনভর চলছে প্রার্থীদের চরকি প্রচার। হাতে আবার নয়া অস্ত্র সোশ্যাল মিডিয়া। তবে ১৪৪ ওয়ার্ডের এই ভোট যুদ্ধ নিয়ে কিঞ্চিৎ বিপাকে রাজ্যের শাসক দল।
এইটুকু পড়ে আপনারা ভাবতেই পারেন, এই লেখা কি কোনও ধাঁধাঁ? আজ্ঞে না। রাজনৈতিক মহল বলছে এমন কথা। তাঁরা বলছেন, একদিকে ছত্রভঙ্গ বিরোধী শিবির। অন্যদিকে রাজ্য সরকারের একাধিক “জনমোহিনী” প্রকল্প। যার সুবিধা কলকাতা পুর এলাকার মানুষ ও পাচ্ছেন। কিন্তু তবু একাধিক এলাকায় প্রচারে বেরিয়ে নাকি জোরালো বার্তা দিতে পারছেন না তৃণমূল প্রার্থীরা।
ভোটের পাটিগণিত বলছে, সংখ্যা গরিষ্ঠতা শাসকদলের হাতে আসার অপেক্ষা মাত্র। তাহলে? @aajkhobor.com আপনাদের সামনে তুলে ধরছে কিছু তথ্য।
১) কলকাতা পুরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ড। তৃণমূলের প্রার্থী অতীন ঘোষ। বিদায়ী পুরসভার ডেপুটি মেয়র তথা স্বাস্থ্য দফতরের মেয়র পরিষদ সদস্য। এই ওয়ার্ডে গত ৩০ বছর ধরে তিনি পুর প্রতিনিধি। প্রচারে বেরিয়ে ‘কাজ হয় নি’ বলতে পারবেন না। আবার বিরোধীদের বিরুদ্ধেও কিছু বলতে পারছেন না।
২) ৩ নম্বর ওয়ার্ড। বিদায়ী কাউন্সিলর তথা তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ ডাঃ শান্তনু সেনের জায়গায় তাঁর চিকিৎসক স্ত্রী কাকলী সেন এবার প্রার্থী হয়েছেন। প্রচারে বের হয়ে তিনি কি স্বামীর সমালোচনা করবেন?
৩) ৬৮ নম্বর ওয়ার্ডে আবার অন্য সমস্যা। সদ্য প্রয়াত সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের বোন তনিমা চ্যাটার্জি নাকি সুব্রতর রাজনৈতিক শিষ্য সুদর্শনা মুখার্জি? তৃণমূলের অফিশিয়াল প্রার্থী সুদর্শনা। জোড়া পাতা প্রতীকে তনিমা। ধর্ম সংকটে শুধু তৃণমূল নয়, ওয়ার্ডের বাসিন্দারাও।
৪) ৭২ এবং ৭৩ এও ছবিটা প্রায় এরকমই। ৭২এ তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকে দল করা, প্রাক্তন পুর চেয়ারম্যান সচ্চিদানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায় দলের টিকিট না পেয়ে নির্দল প্রার্থী। ৭৩ এ মুখ্যমন্ত্রীর ভ্রাতৃবধূ কাজরী বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূলের প্রার্থী। দলের টিকিট না পেয়ে এলাকার দীর্ঘদিনের কাউন্সিলর রতন মালাকার সাময়িক “বিদ্রোহী” হলেও আপাতত গৃহবন্দী।
৫) ৭০ অথবা ৮১, ৮২, ১০০, ১০১, ১০৯। হাই প্রোফাইল এই সব কেন্দ্রে প্রার্থীদের নাম গুলো দেখুন একবার। বিদায়ী মেয়র ফিরহাদ হাকিম, মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের ভ্রাতৃবধূ জুঁই বিশ্বাস, ভবানীপুরের দাপুটে কাউন্সিলর অসীম বসু, দক্ষিণ কলকাতা তৃণমূলের সভাপতি বাপ্পাদিত্য দাশগুপ্ত এবং আরও অনেকে। নিজেরা কেমন কাজ করেছেন সেটা নিজের বলতে হচ্ছে। এলাকা কার্যত বিরোধী শূন্য। অভিযোগের আঙুল তোলার জন্য কেউ নেই।
৬) ওয়ার্ড ১০৭। ডাকাবুকো কাউন্সিলর সুশান্ত কুমার ঘোষ এবার এখান থেকে সরে পাশের ওয়ার্ডে প্রার্থী। কারণ এই ওয়ার্ড সংরক্ষিত। নিজের হাতে কসবায় একাধিক উন্নয়নমূলক কাজ করার সুফল অন্যের হাতে তুলে দিতে হয়েছে। সঙ্গে আবার সমস্যা হল ১০৮ অর্থাৎ এবার যে ওয়ার্ড থেকে লড়তে হচ্ছে, সেখানে আগের কাউন্সিলর ছিলেন নিজের দলেরই। কাঁচের ঘরে শুয়ে কি আর দেওয়ালে ঢিল ছোঁড়া যায়?
১১৫ তে তৃণমূলের একাধিক সাংসদের ছবি সাজিয়ে প্রচারে নেমেছেন নির্দল প্রার্থী। ১২৭ থেকে ১৩৩, শোভন চ্যাটার্জির ছায়ার সঙ্গে লড়তে হচ্ছে তৃণমূল প্রার্থীদের। ফলে সব মিলিয়ে কার্যত বিরোধিহীন ভোট যুদ্ধে কি তৃণমূলের বিড়ম্বনা বাড়াচ্ছে তৃণমূলই?