আজ খবর ডেস্ক : বিধানসভা নির্বাচন শেষ হতেই নন্দীগ্রামে ভোটগণনায় কারচুপির অভিযোগ তুলে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। সেই মামলার এখনও কোনও কিনারা করতে পারেনি হাইকোর্ট। তার মধ্যেই গত সোমবার ভাইরাল হওয়া একটি অডিও ক্লিপকে ঘিরে ফের শুরু হল বিতর্ক। ওই অডিও ক্লিপে এক পুরুষ কণ্ঠকে বলতে শোনা গিয়েছে, কিছু কর্মীর অসহযোগিতার কারণেই নন্দীগ্রামে পরাজিত হয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দাবি করা হচ্ছে, অডিও ক্লিপের ওই কণ্ঠস্বর তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীর। তবে এখনও ওই অডিও ক্লিপের সত্যতা প্রমাণিত হয়নি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২৮ শে নভেম্বর রাতে ভবানীপুর বিধানসভার অন্তর্গত ৭৩ নম্বর ওয়ার্ডে এক কর্মীসভায় যোগ দিয়েছিলেন সুব্রত বক্সী। সেখানেই ওই মন্তব্য করেন সুব্রত। স্থানীয়দের দাবি, সেখানেই রেকর্ড করা তাঁর ওই মন্তব্যই অডিও ক্লিপ হিসেবে ভাইরাল হয়েছে। প্রসঙ্গত, ৭৩ নম্বর ওয়ার্ডে আসন্ন পুরনির্বাচনের তৃণমূল প্রার্থী হলেন মুখ্যমন্ত্রীর ভাই কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী কাজরী বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর সমর্থনেই আয়োজিত কর্মিসভাতে হাজির হয়েছিলেন তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি। ওই অডিও ক্লিপে তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘আমাদের দলের কিছু সহকর্মীর অসহযোগিতার কারণেই মমতা নন্দীগ্রামের প্রতিনিধি হতে পারলেন না। কিন্তু আমরা গর্বিত যে, তিনি ভবানীপুরের মাটি থেকে জিতেই তৃতীয় বারের জন্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন।’’
তৃণমূলকর্মীদের একাংশের দাবি, ভবানীপুরের আটটি ওয়ার্ডেই তৃণমূল প্রার্থীদের জয় ছিনিয়ে আনতেই ওই মন্তব্য করেছেন সুব্রত। তবে কোন কর্মীদের অসহযোগিতার কথা বলতে চেয়েছেন সুব্রতবাবু, সেই বিষয় অবশ্য অডিও ক্লিপে তিনি খোলসা করে কিছু বলেননি।
বিধানসভা নির্বাচনে নন্দীগ্রাম থেকে থেকে যে তিনিই দলের প্রার্থী হবেন, সে কথা গত ১৮ ই জানুয়ারি নন্দীগ্রামেরই এক সভা থেকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন মমতা। তখনও সেই মঞ্চে মমতার পাশে ছিলেন তাঁর দীর্ঘকালের রাজনৈতিক বন্ধু সুব্রত বক্সী। পরে ওই কেন্দ্র থেকে মমতার বিরুদ্ধে বিজেপি-র প্রার্থী হিসেবে শুভেন্দু অধিকারীর নাম ঘোষণা করা হয়। ভোটগণনা শেষে নির্বাচন কমিশন জানায়, ১৯৫৬ ভোটে শুভেন্দুর কাছে হেরে গিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও এরপরও গোটা রাজ্যে তৃণমূল ভাল ফল করে তৃতীয় বারের। মত সরকার গঠন করেন। এরপর গত ৩০ শে নভেম্বর ভবানীপুর থেকে উপনির্বাচনে জিতে নিজের মুখ্যমন্ত্রীপদ সুনিশ্চিত করেন মমতা। এরমধ্যেই নন্দীগ্রাম গত ১৭ ই জুন কেন্দ্রে গণনায় কারচুপির অভিযোগ তুলে হাইকোর্টে আবেদন জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা। আর অভিযোগের নিশানায় ছিলেন নন্দীগ্রামের বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু। তবে সেই মামলা যদিও এখনও চলছে।
তবে আদালতে মামলা চলার দরুন মমতা কখনই দলের নন্দীগ্রামের কোনও কর্মীর বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ আনেননি। ফলপ্রকাশের দিনই মুখ্যমন্ত্রীকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘‘আমরা দু’শোর বেশি আসনে জিতেছি। একটা আসনে হারা জেতা বড় ব্যাপার নয়। ওরা এক বার ঘোষণা করে দিয়েছিল যে আমি জিতে গিয়েছি। এখন বলছে হেরে গিয়েছি। এটা কী করে হয় জানি না। ওখানকার মানুষ যে রায় দিয়েছেন তা মেনে নিচ্ছি। ওখানে ভোটগণনা যাতে রিভিউ করা হয়, সেই দাবি জানাব। দরকার হলে আদালতে যাব।’’ তার ঠিক কিছুদিন পরই মমতা নন্দীগ্রামের ভোটগণনার প্রসঙ্গ তুলে বলেছিলেন, ‘‘বন্দুকের নলের মুখে কাজ করতে হচ্ছে রিটার্নিং অফিসারকে। তিনি যদি পুনর্গণনার নির্দেশ দেন, তা হলে তাঁর প্রাণ সংশয় হতে পারে।’’ সেই সময় নন্দীগ্রামে ইভিএম পাল্টানোরও অভিযোগ তুলেছিলেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘এক জনের কাছ থেকে এসএমএস পেয়েছি। নন্দীগ্রামের এক রিটার্নিং অফিসার জানিয়েছেন, বন্দুকের নলের মুখে কাজ করতে হচ্ছে। তিনি যদি পুনর্গণনার নির্দেশ দেন, তাহলে তাঁর প্রাণ সংশয় হতে পারে। নন্দীগ্রামে মেশিন পাল্টে দেওয়া হয়েছে।’’তবে সুব্রত বক্সীর এমন মন্তব্য ভাইরাল হওয়া নিয়ে তৃণমূল নেতৃত্বের তরফ থেকে এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
তবে বর্ষীয়ান নেতার মন্তব্য শুনে রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছেন, এর থেকে স্পষ্ট হল যে নন্দীগ্রামের ফল নিয়ে এখনও দলের অভ্যন্তরে ময়নাতদন্ত বন্ধ করেনি। তবে অডিও ক্লিপের কণ্ঠ যে তাঁরই, সেই কথা ইতিমধ্যেই স্বীকার করে নিয়েছেন সুব্রত। তিনি বলেন, ‘‘আমি অনেক সভাতেই এ কথা বলে থাকি। মুখ্যমন্ত্রীকে হারাতে নন্দীগ্রামে ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত যেমন হয়েছিল। তেমনই হয়েছিল কিছু কর্মীদের অসহযোগিতা। তাই তো রাজ্যের তৃতীয়বারের মুখ্যমন্ত্রী হলেও, তিনি নন্দীগ্রামের বিধায়ক হতে পারেননি। তবে তিনি সব সময় নন্দীগ্রামকে সম্মান দিয়েছেন। আগামী দিনেও নন্দীগ্রামের পাশেই থাকবেন।’’