আজ খবর ডেস্ক : দীর্ঘ ২১ বছরের অপেক্ষার অবসান! ভারতীয় কন্যার মাথায় উঠল মিস ইউনিভার্সের মুকুট। লুধিয়ানার হারনাজ সান্ধু জিতে নিলেন ৭০ তম বিশ্ব সুন্দরীর খেতাব। মিস ইউনিভার্সের মঞ্চে বিশ্বের সেরা সুন্দরীদের পাশে দাড়িয়ে যখন প্রত্যেক প্রতিযোগীর একটাই চিন্তা, কে হবেন সেরা সুন্দরী- সেই চূড়ান্ত ক্ষনেই সমস্ত উত্তেজনা ভেঙে ঘোষকের মুখে উচ্চারিত হল বিজয়ীর নাম। নতুন মিস ইউনিভার্স হিসেবে ভারতীয় কন্যা হারনাজ সান্ধু, এই ঘোষণা শোনা মাত্রই উচ্ছ্বাসে লাফিয়ে ওঠেন মঞ্চেই। চির আকাঙ্ক্ষিত এই ইচ্ছে শেষমেশ পূরণ হওয়াতে আনন্দে চোখের জল বাধ মানছিল না হারনাজের। আবেগতাড়িত হয়ে তাঁর শেষ প্রতিদ্বন্দ্বী মিস প্যারাগুয়েকে জড়িয়ে ধরেই হাউ-হাউ করে কাঁদতে শুরু করেন তিনি। এরপরই নিজেকে খানিকটা সামলে নিয়ে এগিয়ে আসেন বিচারকদের দিকে। প্রথমে তাঁকে পরিয়ে দেওয়া হয় মিস ইউনিভার্স ২০২১-এর ব্র্যান্ড-বেল্ট। তারপর তাঁর হাতে অভিনন্দন হিসেবে তুলে দেওয়া হয় ফুলের তোড়া। আর সবশেষে সেই চিরপ্রতীক্ষিত মুকুট হাতে এগিয়ে আসেন গতবছরের বিজয়ী মিস ইউনিভার্স। প্রথা মেনেই তিনি তাঁর মিস ইউনিভার্সের মুকুট নতুন বিশ্ব সুন্দরীর মাথায় পরিয়ে দেন।

এরআগে ২০০০ সালে মিস ইউনিভার্সের মঞ্চে শেষবার কোন ভারতীয় বিশ্ব সুন্দরীর খেতাব জিতেছিলেন। সেই বার মিস ইউনিভার্সের মুকুট উঠেছিল লারা দত্ত – এর মাথায়। কিন্তু তারপর থেকে টানা দুই দশক ধরে ভারতীয় প্রতিযোগীদের চূড়ান্ত প্রচেষ্টার পরও সাফল্য আসেনি। মিস ইউনিভার্স জয়ের ক্ষেত্রে ভারতের হারনাজ সান্ধু- যে একজন শক্তিশালী প্রতিযোগী হতে চলেছে, তা প্রথম থেকেই বোঝা গিয়েছিল। কারণ শুধু রূপের সৌন্দর্য নয়, মিস ইউনিভার্স হতে গেলে এছাড়াও যে বৈশিষ্ট্যগুলি একজনের মধ্যে থাকা দরকার, তার সমস্তটাই ছিল হারনাজের মধ্যে। ফলে ইজরায়েলের এলিয়াটে মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতার শুরু থেকেই আলোচনার শীর্ষে ছিলেন হারনাজ। ভারতের মেয়ে হারনাজের পর শেষ ৩-এ জায়গা করে নেন প্যারাগুয়ে এবং দক্ষিণ আফ্রিকার দুই প্রতিযোগী।

নতুন মিস ইউনিভার্সের নাম ঘোষণা করার আগে তিন চূড়ান্ত প্রতিযোগীদের কাছে শেষ প্রশ্নে, এখনকার মহিলারা কীভাবে জীবনের চাপ সামলাবেন সেই বিষয় পরামর্শ দিতে বলা হয়েছিল। এর উত্তরে হারনাজ বলেন, “আমি মনে করি আজকের যুবারা সবচেয়ে বড় যে সমস্যাটা অনুভব করছে তা হল নিজের প্রতি বিশ্বাস। আমি এই যুবাদের উদ্দেশ্যে একটা বার্তাই দিতে চাইবো যে নিজের প্রতি বিশ্বাস হারিয়ো না। নিজেকে অন্যদের সঙ্গে তুলনা করাটা বন্ধ কর। জানবে তোমার মধ্যেও এমন কিছু জিনিস রয়েছে যা অন্য কারওর মধ্যে নেই। আর এই ইউনিকনেস তোমাকে তুমি করে তোলে। তুমি সত্যি সুন্দর। বরং আজ বিশ্বজুড়ে যে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে তাতে অংশ নাও। তাই বলছি তোমরা নিজেদের উপর বিশ্বাস হারিয়ো না। তোমরা তোমাদের মনের এক অবস্থা থেকে বেরিয়ে এসে নিজের জন্য কথা বলো, নিজের বিশ্বাসকে মেলে ধর। আমি প্রবলভাবে নিজের উপর আস্থাশীল। আর সেই কারণেই আজ আমি এখানে দাঁড়িয়ে রয়েছি। ধন্যবাদ।”

প্রসঙ্গত, হরনাজ চণ্ডীগড়ের বাসিন্দা। তিনি সেখানকার একটি শিখ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। হরনাজ একজন স্বাস্থ্য সচেতন ও যোগ প্রেমী। প্রথম ২০১৭ সালে হরনাজ মিস চণ্ডীগড়ের খেতাব জিতেছিলেন। এরপর ২০১৮ সালে হরনাজ মিস ম্যাক্স ইমার্জিং স্টার ইন্ডিয়ার খেতাবও জিতে নেন। দুটি আকর্ষণীয় খেতাব জেতার পরই হারনাজ মিস ইন্ডিয়া ২০১৯ – এ অংশগ্রহণ করেন। যেখানে তিনি প্রথম ১২-এ জায়গা করে নিয়েছিলেন।এছাড়া জানিয়ে রাখি, হরনাজের আগে ২০০০ সালে এই খেতাব জিতেছিলেন লারা দত্ত। তার আগে ১৯৯৪ সালে প্রথমবার এই প্রতিযোগিতায় ভারতীয় হিসেবে জয় হাসিল করেন সুস্মিতা সেন। এই নিয়ে তৃতীয়বারের জন্য বিশ্ব সুন্দরীর খেতাব পেলেন একজন ভারতীয়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *