আজ খবর ডেস্ক : তখনও চুটিয়ে প্রেম করছেন প্রেমিক যুগল। মাথায় নেই ভবিষ্যতের ভাবনা। শুধু চিন্তা একটাই শিক্ষা ঋণের টাকা শোধ করতে হবে। তারপর বাকি ভাবনা। এর মধ্যেও দেখা-সাক্ষাৎ, রাতে একসঙ্গে কোন এক সস্তার রেস্তরাঁয় নৈশভোজ— এ ভাবেই বেশ দিন কাটছিল ড্যানি স্টুয়ার্ট ও পিট মার্কিউরিওর। কিন্তু হঠাৎই একদিন নিউ ইর্য়কের সাবওয়ে থেকে পাওয়া একটি শিশু যেন জীবন বদলে দিল তাঁদের।
২০০০ সালের ২৮ আগস্ট মাসের ঘটনা। অন্য দিনের মতোই ড্যানি স্টুয়ার্ট প্রেমিক পিট মার্কিউরিও-এর সঙ্গে নৈশভোজে বেরিয়েছিলেন। চেলসি-র ফরটিন্থ স্ট্রিট স্টেশন-এ নেমে ড্যানি ভূগর্ভস্থ পথ ধরে হাঁটার সময়, ড্যানির কথায়, ‘‘দেরি হয়ে গিয়েছে বলে হন্তদন্ত হয়ে হাঁটছিলাম। হঠাৎ চোখে পড়ে, কী একটা পড়ে রয়েছে। প্রথমে ভেবেছিলাম, কাপড়ে মোড়া পুতুল। কোনও শিশু বোধ হয় ফেলে গিয়েছে।’’ভূগর্ভস্থ পথের সিঁড়ি ধরে উঠেই ব যাচ্ছিলেন ড্যানি, তবু কী মনে হল, ফিরে তাকালেন তিনি। চোখে পড়ল কাপড়ের মধ্যে দিয়ে বেরিয়ে থাকা ছোট্ট দুটি পা। ড্যানি বলেন, ‘‘তার গায়ে কোনও জামা ছিল না। কাপড় জড়ানো। নাভির কর্ড ভাল করে কাটা হয়নি। সদ্যজাতের বয়স হয়তো ঘণ্টাখানেক হবে।’’ প্রথম দেখায় বিস্ময়, হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে ড্যানি। একরত্তি শিশুটিকে কেন এই ভাবে ছেড়ে গেলেন তার মা , তা বুঝে উঠতে পারছিলেন না তিনি। চিৎকার করে যাত্রীদের পুলিশকে ডাকতে বলেন। তবে কেউই তার কথায় বিশেষ আমল দিচ্ছিলেন না।
অবশেষে এক মহিলা এগিয়ে আসেন। কিন্তু, তিনি ইংরেজি বুঝতে না পারায় খুব একটা সাহায্য হয়নি।শেষমেশ তাঁকে শিশুটিকে দেখতে বলে, তিনি নিজেই ৯১১ নম্বরে ফোন করে পুলিশকে জানান বিষয়টি। ড্যানি বলেন, ‘‘প্রথমে পুলিশও বিশ্বাস করেনি। ভেবেছিল ভুয়ো ফোন।’’ বাধ্য হয়ে শেষে প্রেমিক পিটকে ফোন করেন ড্যানি। পিট তাঁর কথা বিশ্বাস করে দ্রুত ছুটে আসেন সাবওয়েতে। ততক্ষণে পুলিশও এসে পৌঁছায় সেখানে। তারপর তাঁরাই স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যায় শিশুটিকে।তবে এখানেই শেষ নয়।
তিন মাস পর ওই শিশুটির উদ্ধার সংক্রান্ত একটি মামলার শুনানিতে বিচারক ওই দু’জনকে ডেকে পাঠান। শুনানিতে বিচারক বলেন,‘‘আপনারা কি শিশুটিকে দত্তক নিতে আগ্রহী?’’ দু’জনেরই উত্তর ছিল ‘ হ্যাঁ ‘ । তারপরই বিচারক তাঁদের শিশুটিকে দত্তক নেওয়ার অনুমতি দেন। স্থায়ী রোজগার নেই, তার উপর মাথায় ঋণের বোঝা, কী করে শিশুটিকে লালন-পালন করবেন— এই সব প্রশ্ন মাথায় থাকলেও শিশুটির কথা ভেবেই দু’জনে দত্তক নিতে রাজি হয়ে যান। সদ্যোজাতের নাম রাখেন ‘কেভিন’।
কেভিন তাঁদের জীবনে আসায়, এতদিন ধরে চলা জীবনের গতিপথ যেন এক নিমেষে বদলে গেল। বিয়ে করে ফেললেন দু’জনে। তাঁদের নতুন সংসার জীবনে এগিয়ে এলেন তাঁদের প্রতিবেশী বন্ধুরাও। শিশুটিকে মানুষ করতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন তাঁরা। এখন কেভিন অনেকটাই বড় হয়েছে। ২১ বছরের তরুণ এখন কলেজ পড়ুয়া। তাঁকে ঘিরেই এখন পিট ও ড্যানির জীবন আবর্তিত। গত বছর তাঁদের জীবন নিয়ে একটি বই লিখে ফেলেছেন তাঁরা। যায় নাম ‘আওয়ার সাবওয়ে বেবি’। বইটিতে তাঁরা বলেছেন, নিজেদের ছেলেকে লেখা ‘ভালবাসার চিঠি’। ড্যানি বলেন, ‘‘ছোট থেকে আমরা কোনও দিন তাকে বলিনি, তোমায় কুড়িয়ে পেয়েছি। বলেছি, তোমার মা তোমায় ওই জায়গায় রেখে গিয়েছিলেন যাতে আমরা তোমায় পাই।’’