আজ খবর ডেস্ক- একের পর এক “বেফাঁস” মন্তব্য। তবে, শুক্রবারের ঘটনা মারাত্মক বিব্রত করেছে তৃণমূল নেতৃত্ব কে। মুকুল রায় অসুস্থ, সে খবর সকলেই জানেন। কিন্তু সদ্য শেষ হওয়া কলকাতা পুরভোট সংক্রান্ত আইনি লড়াই এবং বিরোধীদের তির্যক আক্রমণ সামাল দেওয়ার মাঝে মুকুলের বক্তব্য নিয়ে নাকি রীতিমতো ক্ষুব্ধ তৃণমূল কংগ্রেসের একটি অংশ।
জানা গেছে, শুক্রবার দলের কোনও কর্মসূচি ছিল না। এদিন বোলপুরে পৌষমেলায় যান মুকুল রায়। সার্কিট হাউস থেকে বেরোনোর সময় সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হন তিনি। সঙ্গে তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল সহ জেলার তৃণমূল নেতারা ছিলেন। রাজ্য জুড়ে আসন্ন পুরভোট নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মুকুল বলেন, ‘এই পৌর নির্বাচনে সারা পশ্চিমবাংলায় বিপুল ভাবে ভারতীয় জনতা পার্টি জয়ী হবে।’’ সংবাদমাধ্যমকে যখন এমন কথা মুকুল বলছেন তখন তাঁর পাশেই ছিলেন অনুব্রত মণ্ডল। কেউ একজন মুকুলকে ভুল ধরিয়ে দিয়ে জানান, তাঁর ‘তৃণমূল’ বলা উচিত। এর পর মুকুল বলেন, ‘‘তৃণমূল তো বটেই। ভারতীয় জনতা পার্টি মানেই তৃণমূল।’’
ঠিক এর আগেই বিধানসভায় আরেক কান্ড ঘটান মুকুল রায়। স্পিকারের কাছে পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির (PAC) চেয়ারম্যান মুকুল রায়ের বিরুদ্ধে দলত্যাগ বিরোধী আইন কার্যকর করার আর্জি জানিয়েছে বিজেপি। শুক্রবার বিধানসভায় শুনানিতে হাজির হননি কৃষ্ণনগর উত্তরের বিধায়ক। সূত্রের খবর, স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়কে আইনজীবী মারফৎ চিঠি পাঠান মুকুল। সেখানে তিনি জানিয়েছেন, এখনও বিজেপিতেই আছেন। তৃণমূলে আদৌ যোগ দেননি।
২১শের বিধানসভা ভোটে বিজেপির টিকিটে কৃষ্ণনগর উত্তর থেকে বিধায়ক নির্বাচিত হন মুকুল। ভোটের ফলপ্রকাশের পর ১১ জুন ছেলে শুভ্রাংশুকে নিয়ে যোগ দেন তাঁর পুরোনো দল তৃণমূলেই। এর আগে ৬ই আগস্ট কৃষ্ণনগরে গিয়ে মুকুল রায় বলেছিলেন, ‘ভারতীয় জনতা পার্টির পক্ষ থেকে আমি বলতে পারি, তৃণমূল পর্যুদস্ত হবে এবং এই কৃষ্ণনগরে নিজেদের স্বমহিমায় নিজেদের প্রতিষ্ঠা করবে বিজেপি।
যদিও মুকুল-পুত্র শুভ্রাংশু রায় মিডিয়াকে জানান, ‘আজ দলের কোনও অনুষ্ঠানও ছিল না। সরকারি কর্মসূচিও ছিল না। বাবাকে ডাক্তার বলেছেন, একটু বাইরে বেরোতে। সারাদিন বাড়িতে বসে না থেকে জায়গা বদল করতে। মা মারা ঝআওয়ার পর এবং কোভিডের কারণে বাবার পটাশিয়াম-সোডিয়াম লেভেলটাও ওঠা-নামা করছে। কোথায় কী করছে, কী বলছে, নিজেও বুঝতে পারছে না।’
তবে বোলপুরের ঘটনার পর নড়েচড়ে বসেছে মুকুলের বর্তমান দল তৃণমূল কংগ্রেস।এদিন তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘বোলপুরে মুকুল রায় যা বলেছে, দল তা অনুমোদন করে না। তিনি শারীরিকভাবে সুস্থ নন, ভারসাম্য হারিয়েছেন। ওঁর সুস্থতা কামনা করি’। সঙ্গে ‘ইঙ্গিতপূর্ণ’ মন্তব্য, ‘শারীরিক অসুস্থতার কারণে পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটিতে থাকতে না চাইলে দল বিবেচনা করবে’।
এদিকে, মুকুলের এই মন্তব্য প্রসঙ্গে বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ শনিবার সকালে বলেন, ‘‘এমনিতেই শারীরিক অবস্থা ঠিক ছিল না ওঁর। যে ভাবে তাঁকে অপব্যবহার করা হয়েছে, অপমান করা হয়েছে, আমার মনে হচ্ছে শেষ জীবনে এটা ঠিক নয়। উনি একজন সিনিয়র মানুষ। ওঁর শেখা উচিত। শেষ জীবনে এটা ওঁর বোঝা উচিত। শেষ জীবনে এত কষ্ট পাওয়া, এত অপমানিত হওয়া! আমার মনে হয় যাঁরা এই ধরনের রাজনীতি করেন, তাঁদের বোঝা উচিত।’’ দিলীপ শুধু নন, প্রকাশ্যে না বললেও একাধিক বিরোধী নেতার দাবি, এটা তৃণমূলের “সাজানো ঘটনা”।
বিশেষ সূত্রে খবর, মুকুলের গতিবিধি ও মিডিয়ার সামনে বক্তব্য রাখার বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে তৃণমূল। চিকিৎসকরা মুকুলের শারীরিক পরিস্থিতি বিচার করে তাঁকে বিশ্রামে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব তাই পিএসির চেয়ারম্যান পদ থেকেও মুকুল কে অব্যাহতি দেওয়া হবে কি না, তা নিয়ে ভাবনা চিন্তা করছে।