আজ খবর ডেস্ক- পণ্য-পরিষেবা কর ধার্য হওয়ার যে কথা ছিল, তা আপাতত হচ্ছে না।
১) রেডিমেড পোশাকে, বিশেষত ১০০০ টাকার কম দামের পোশাকে জিএসটি বাড়ান হলে, আমজনতার ওপর বোঝা চাপবে।
২)বস্ত্র শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ছোট কারখানাও এর ধাক্কা সামলাতে না পেরে ঝাঁপ ফেলতে বাধ্য হবে।
৩)অনেক কারখানা করের বোঝা এড়াতে অসংগঠিত ভাবে ব্যবসা চালাতে চাইবে। ক্ষতি হবে কর্মচারীদের।
মূলত এই তিন আশঙ্কা থেকেই পোশাকে জিএসটি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখল কেন্দ্রীয় সরকার।
জানা গিয়েছে, মূলত পশ্চিমবঙ্গ, তামিলনাড়ু এবং বিজেপি শাসিত গুজরাটের আপত্তিতে স্থগিত হয়ে গেল পোশাকের ওপর ৫ থেকে বাড়িয়ে ১২ শতাংশ জিএসটি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত।
শুক্রবার জিএসটি পরিষদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, এখন পোশাকের ওপরে জিএসটি-তে আগের হার বজায় থাকবে। ১ জানুয়ারি থেকে যে নতুন হারে পণ্য-পরিষেবা কর ধার্য হওয়ার কথা ছিল, তা হচ্ছে না।
লাগাতার কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করে যাচ্ছিলেন ব্যবসায়ীরা। অন্য দিকে, ৫ রাজ্যে বিধানসভা ভোট। নিতান্ত রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা থেকেই কি কম দামের জামাকাপড়ের ওপর কর বাড়ানোর থেকে বিরত থাকছে কেন্দ্র? নানা মহলে ঘুরে ফিরে আসছে এই প্রশ্ন।
তবে এই সিদ্ধান্তে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা খুশি। যদিও এই প্রস্তাব পুরোপুরি তুলে না নেওয়ায় উদ্বেগ থেকেই যাচ্ছে বলে জানিয়েছে তৈরি (রেডিমেড) জামাকাপড় শিল্প সংগঠন।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তথা অর্থমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পোশাকে জিএসটি বাড়ানোর বিরুদ্ধে ছিলেন। তাঁর মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা অমিত মিত্রও এ বিষয়ে সরব হন। গত সেপ্টেম্বরে লখনউয়ে জিএসটি পরিষদের বৈঠকে রাজ্যের অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এ নিয়ে আপত্তি তুলেছিলেন। কিন্তু কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক তখন তাতে গুরুত্ব দেয় নি। কেন্দ্রের যুক্তি ছিল, পোশাকের ক্ষেত্রে মূল পণ্যের থেকে কাঁচামালে জিএসটির হার বেশি। এর ফলে মূল পণ্যের দাম আখেরে বেড়েই যায়। তা ছাড়া, জিএসটি আদায়ের থেকে কাঁচামালে মেটানো কর বেশি পরিমাণে ছাড় দিতে হয়। তাতে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হয়।
একই যুক্তিতে জুতো-চপ্পলের জিএসটিও বাড়ান হয়েছিল। শুক্রবার জিএসটি পরিষদের বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গের তরফে জুতো-চপ্পলে জিএসটি বাড়ানোর সিদ্ধান্তেরও বিরোধিতা করা হয়েছে। ওই সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখার দাবি তোলেন চন্দ্রিমা। তাঁর যুক্তি, ১০০০ টাকা দামের জুতো-চপ্পলে জিএসটি বাড়লে, সাধারণ মানুষের বোঝা বাড়বে। একই সঙ্গে সরকারি সংস্থার নির্মাণ কাজের বরাতে জিএসটির হার ১২ থেকে ১৮ শতাংশ করারও বিরোধিতা করেন তিনি। কিন্তু এই বিষয়গুলি আলোচ্যসূচিতে না থাকায় আপাতত এ নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। ফলে ১ জানুয়ারি থেকে জামাকাপড়ের দাম না বাড়লেও,জুতো-চপ্পলের ক্ষেত্রে তা বৃদ্ধির সম্ভাবনা যথেষ্ট।
বিভিন্ন পণ্যে জিএসটির হার যুক্তিযুক্ত করার রাস্তা খুঁজতে রাজ্যের অর্থমন্ত্রীদের একটি গোষ্ঠী আগেই তৈরি করা হয়েছিল। কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী তথা অর্থমন্ত্রী বাসবরাজ বোম্মাইয়ের নেতৃত্বাধীন ওই কমিটিতে চন্দ্রিমাও রয়েছেন। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সিতারমন জানান, ওই কমিটি ফেব্রুয়ারিতে রিপোর্ট দেবে। তার পরে ফের জিএসটি পরিষদের বৈঠক ডাকা হবে।