আজ খবর ডেস্ক- এ যেন বিজন ভট্টাচার্যের সেই নাটকের নয়া রূপ! দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই বাংলার করুণ অবস্থা দেখে নাট্যকার বিজন লিখেছিলেন “অন্ন চাই, প্রাণ চাই”। দীর্ঘ কয়েক দশক পেরিয়ে এসে এই সময়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্র উত্তর কোরিয়ায় ঠিক যেন সেই ছবি ফিরে এল।
আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থার খবর অনুসারে, উত্তর কোরিয়ার মানুষ একটু খাবারের অভাবে হাহাকার করছেন। তাই বাধ্য হয়ে নতুন বছরের শপথে সুর বদলালেন উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং উন। পরমাণু অস্ত্রের বদলে খাদ্য উৎপাদন এবং জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে জোর দেওয়ার কথা বললেন তিনি।
সম্প্রতি শেষ হয়েছে উত্তর কোরিয়ার ওয়ার্কার্স পার্টি-র অষ্টম সেন্ট্রাল কমিটি প্লেনারি। ব সমাপ্তি অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেন কিম জং উন। সেখানেই তিনি দেশের আর্থিক পরিস্থিতি নিয়ে রীতিমত উদ্বেগ প্রকাশ করেন। বলেন, ‘‘দেশে জীবন-মরণ লড়াই চলছে। তাই ২০২২-এ উত্তর কোরিয়ার মূল লক্ষ্য হবে আর্থিক উন্নয়ন।’’
এই বছর তাঁর প্রেসিডেন্ট পদে দায়িত্ব নেওয়ার ১০ বছর পূর্ণ হয়েছে। ২০১১ সালে তাঁর বাবা প্রয়াত হওয়ার পর তিনি ওই পদে বসেন।
দিন কয়েক আগেই কিম নতুন বছরে একাধিক নীতিগত পরির্বতনের কথা ঘোষণা করেছিলেন। বিশেষত, দক্ষিণ কোরিয়া এবং আমেরিকার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলার ওপর জোর দিয়েছিলেন। তবে এ বার সরাসরি দলের বৈঠকে তাঁর আর্থিক উন্নয়নের প্রসঙ্গ তোলা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করেছে আন্তর্জাতিক মহল।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং বিশ্ব অর্থনীতি নিয়ে কাজ করেন যাঁরা, তাঁদের মতামত কী?তাঁরা বলছেন, করোনার শুরু থেকেই দেশে অভ্যন্তরীণ লকডাউন জারি করে কিম সরকার। ফলে কার্যত গোটা বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় উত্তর কোরিয়ার। ভেঙে পড়ে অর্থনীতি। তারই রেশ ধরে দেশে চূড়ান্ত খাদ্য সংকট। এই পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে পরমাণু অস্ত্র নিয়ে আলোচনা বন্ধ রেখে কিম আর্থিক উন্নয়ন এবং জনগণের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের দিকে জোর দিতে চাইছেন।
দলীয় বৈঠকে কিম তাঁর বক্তৃতার সিংহভাগ ব্যয় করেছেন গ্রামীণ উন্নয়ন, মানুষের খাদ্যাভ্যাস ও স্কুল শিক্ষার প্রয়োজনীয়তার উপর। ‘অসমাজতান্ত্রিক অভ্যাস’গুলির পরিবর্তনের উপর জোর দিয়েছেন তিনি। তিনি জানিয়েছেন, পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার মাধ্যমে উন্নয়নের কাজ চলবে।
এমনিতেই আমেরিকার সঙ্গে মোটেও “বন্ধুত্বপূর্ণ” সম্পর্ক নেই কিমের দেশের। এই অবস্থায় অন্যান্য দেশ থেকে আদৌ কি সাহায্য পাবে উত্তর কোরিয়া? তাঁর সিদ্ধান্তের কারণেই আসলে ভুগতে হচ্ছে সে দেশের মানুষকে, এমনটাই মনে করছে আন্তর্জাতিক মহল। এমনকি, উত্তর কোরিয়ার এই সমস্যা উঠতে পারে রাষ্ট্রপুঞ্জের মঞ্চেও।