আজ খবর ডেস্ক- প্রবল বৃষ্টিপাতে বানভাসি মালয়েশিয়া। গত রবিবার থেকে শুরু লাগাতার বৃষ্টিতে সেখানকার ৭ টি রাজ্য এখনও পর্যন্ত বন্যার কবলে পড়েছে। বিপর্যস্ত হাজার হাজার মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে নিরাপদ আশ্রয়ে। সেখানকার জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, গত দুই সপ্তাহ জুড়ে চলা ভারী বৃষ্টিপাতে সেখানে মোট ক্ষতিগ্রস্তের সংখ্যা ১ লক্ষ ২৫ হাজার পার করেছে।
সংস্থাটির প্রকাশিত একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে কেলান্তান, তেরেঙ্গানু, পাহাং, জোহর, মালাক্কা, নেগেরি সেম্বিলান এবং সাবাহ – র মত জায়গাগুলি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে । ৮৭২৭ জনকে ১২৮ টি ত্রাণ কেন্দ্রে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। দেশব্যাপী বন্যায় মোট ১ লক্ষ ২৬ হাজার ৪৯০ জন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারমধ্যে ১ লক্ষ ১৭ হাজার ৭০০ জনকে তাদের নিজেদের আবাসনে ফেরানোর ব্যবস্থা করানো সম্ভব হয়েছে।
মালয়েশিয়ার বার্ষিক বর্ষাকালীন মরশুমে অক্টোবর থেকে মার্চের মধ্যে পূর্ব উপকূলে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হওয়া নতুন ঘটনা নয়। তবে গত ১৭ ই ডিসেম্বর থেকে সেখানে শুরু হওয়া অস্বাভাবিক ভারী বৃষ্টিপাত হাজার হাজার মানুষকে ঘরছাড়া করেছে। পরিস্থিতির এতই অবনতি ঘটেছে যে জরুরি পরিষেবা প্রদানের কাজও ব্যাহত হয়েছে।
সেখানকার ইন্সপেক্টর-জেনারেল অ্যাক্রিল সানি আবদুল্লাহ সানির তরফ থেকে করা একটি টুইট অনুসারে, বন্যায় এখনও পর্যন্ত ৫০ জন মারা গিয়েছে। তারমধ্যে ২ জন নিখোঁজ রয়েছে। দুই সপ্তাহ আগে মালয়েশিয়ার বন্যার প্রথম পর্যায়ে সেখানকার বিরোধী আইনপ্রণেতারা প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে কর্তৃপক্ষের পরিষেবা প্রদানে বিলম্বের জন্য সমালোচনার সুর চড়িয়েছিলেন।এমনকি বন্যা পরিস্থিতিতে দুই দিন ধরে আটকে থাকা এক যুবক দাবি করেন, “সরকারের কাছ থেকে কখনই আমাদের জন্য সাহায্য আসেনি। “
আবহাওয়া দপ্তরের তরফ থেকে জারি করা ভারী বৃষ্টিপাতের সতর্কতার পরই সেখানকার জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলা কেন্দ্রের তরফ থেকে একটি দুর্যোগ মোকাবিলা প্রস্তুতি সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। সেচ ও নিষ্কাশন বিভাগের তরফ থেকেও ২ থেকে ৫ জানুয়ারির মধ্যে উচ্চ জোয়ারের সতর্কতা জারি করা হয়েছে। পাশাপাশি মালয়েশিয়ার পশ্চিম উপকূলের বাসিন্দাদের ওই বিবৃতিতে বিশেষ ভাবে সতর্ক করা হয়েছে।
মালয়েশিয়া সরকারের তরফ থেকে চলতি মাসে ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য নগদ সহায়তার ঘোষণা করা হয়েছে। অন্যান্য ক্ষেত্রে ত্রাণ হিসাবে আরও ১.৪ বিলিয়ন রিঙ্গিত (৩৩৬.২২ মিলিয়ন) প্রদানের কথাও জানান হয়েছে। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে একটি নতুন জাতীয় পরিকল্পনা তৈরি করার জন্য জাতিসংঘের ‘গ্রীন ক্লাইমেট ফান্ড’ – এর থেকে ৩ মিলিয়ন ডলার সাহায্যের অনুরোধ জানান হয়েছে। মহাসচিব জাইনি উজাং-এর মতে, পরিকল্পনাটি জল, কৃষি, এবং খাদ্য নিরাপত্তা, জনস্বাস্থ্য, বনায়ন এবং কাঠামোগত বিষয়গুলির উপর মূলত গুরুত্ব দেবে।
তবে অনুরোধ করা তহবিল বন্যা প্রশমনের প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে দেশটির ক্ষতির নিরিখে যে পরিমাণ ব্যয় হতে পারে তার তুলনায় নগণ্য। কারণ বিশেষজ্ঞদের মতে, পরিকল্পনাটির বাস্তবায়নে সম্ভবত আরও অনেক বেশি ব্যয় হবে।