আজ খবর ডেস্ক : পুনিত দত্তের কথায়, ” দিল্লি থেকে বৃন্দাবন যাওয়ার সময় যমুনা নদীতে কিছু ভাসতে দেখতে পেলাম। কি জিনিস, দেখতে দাড়িয়ে পড়লাম। দেখতে পেলাম অনেক থার্মকল ভাসছে। সেদিন জলে অত থার্মকল ভাসতে দেখে আমি ভীষনভাবে হতাশ হই।”এরপর বৃন্দাবন পৌঁছে পুনিতের চোখে পড়ে , সেখানে সারিবদ্ধ ভাবে দীর্ঘ লাইনে দাড়ানো অনেক মানুষকে খাওয়ার দেওয়া হচ্ছে। সেটাও থার্মকলের প্লেটে। তাঁর কথায় , ” অধিকাংশ মানুষ থর্মকলের প্লেট না পেয়ে পুরিকে ( কচুরির মত খাবার) বাটির মত করে ব্যাবহার করে তরকারি নিচ্ছে। আমার মনে হল, পুরি ব্যবহারের এটি বেশ অভিনব একটি উপায় ।”সেই দৃশ্যই পুনিতকে ভোজ্য কাটলারি তৈরির জন্য অনুপ্রাণিত করে। এই নিয়ে দীর্ঘ ৬ বছর গবেষণার পর ২০১৯ সালের ১৫ ই আগস্ট Attaware Biodegradable Private Limited তৈরী হয়।

তার তৈরি প্রথম জিনিসটি ছিল একটি ভোজ্য চা কাপ। পুনিত বলেন, “এক কাপ চা বা কফির পাশাপাশি আমরা কিছু খেতে অভ্যস্ত। যেমন বিস্কুট, খাস্তা বা মাট্টির মত কিছুও (উত্তর ভারতে তৈরি একটি সুস্বাদু খাওয়ার)। এই ভোজ্য কাপ (edible cup) আমাদের খাওয়ার প্রয়োজন মেটাতেও সাহায্য করবে।”একাধিক উপকরণ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর, পুনীত গম, বাজরা, জোয়ার, ভুট্টা এবং গুড়ের সাথে আরও অনেক শস্যের মিশ্রণ ঘটিয়ে একটি ভোজ্য কাপ তৈরি করেন। তিনি বলেন, “এটি অস্বাস্থ্যকর স্ন্যাকসের দুর্দান্ত বিকল্প হিসেবে কাজ করবে। এটিতে ভাল পরিমাণে ক্যালসিয়াম, প্রোটিন এবং খনিজ পদার্থ রয়েছে”।

সেই সঙ্গে পুনীত বলেন, অন্য সমস্ত কিছুর মতো তাদের ব্যবসায়ও করোনা আবহে বেশ প্রভাবিত হয়েছিল। তিনি বলেন, “আমরা যে পণ্যগুলি খুচরা পণ্য হিসেবে বিক্রি করছিলাম তার মধ্যে কিছু অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে, পাশাপাশি কিছু পণ্যের চাহিদা একেবারেই পরে যায়। কোনও বড় সমাবেশ এবং পার্টি না হওয়ায় প্লেট এবং সার্ভারের চাহিদা ব্যাপকভাবে হ্রাস পায়। আমাদের প্রচুর অর্ডার বাতিল হয়ে যায় করোনাকালে। তখনই আমরা শুধু ভোজ্য কাপ তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি ।”সেই সঙ্গে তিনি যোগ করেন, দুই বছরের প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে বেশ কিছু জিনিস শেখা হয়েছে তাদের মূল শিক্ষার মধ্যে একটি ছিল শস্য এবং গুড় ব্যবহার করা এবং শুধুমাত্র গম নয় , অন্যান্য পণ্য দিয়েও ভোজ্য কাপ তৈরি করা। যা ৬ মাস থেকে ১২ মাস পর্যন্ত ভাল থেকে। এই ভোজ্য কাপগুলি Attaware-এর সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম থেকে ১০ থেকে ১২ টাকা দামে কেনা যাবে। যদি কেউ এটি পাইকারি ভাবে কিনতেও আগ্রহী হন, সেক্ষেত্রে পুনিত বলেন যে , এটি ক্রেতাদের বসবাসের স্থানের উপর নির্ভর করে।

২০২১ সালে, ৯ টি নতুন স্বাদের ভোজ্য কাপ তৈরি করা হয়। যার মধ্যে রয়েছে আদা, ক্যারামেল, সানফ (মৌরি বীজ), ইলাইচি (এলাচ), কমলা, তুলসি, স্ট্রবেরি, ভ্যানিলা এবং কফি। পুনিতের কথায়, “যেই গ্রাহকরা বিভিন্ন স্বাদের ভোজ্য কাপ তৈরির অনুরোধ করেছিলেন, তাদের কাছে তাদের পছন্দ মত কাপ বিক্রি করার ক্ষেত্রে সুবিধে হবে বিক্রেতাদের।”পুনীতের কথায়, সমস্ত ব্যবসার মতই তাঁর যাত্রার পথেই অনেক চড়াই উতরাই ছিল । কিন্তু তার পরও বছরের শেষে উঠে আসা পরিসংখ্যান তাঁকে চলার পথে স্বস্তি যোগায়। পুনিত জানান, “আমাদের সমীক্ষায় দেখা যায় অ্যাটাওয়্যার ৯০-টন প্লাস্টিকের কাটলারিকে ল্যান্ডফিলগুলিতে পৌঁছানোর থেকে প্রশমিত করেছে। আমাদের উদ্যোগ ৩৫,০০,০০০ লিটারের বেশি জল সংরক্ষণ করতে এবং মহামারী চলাকালীন ৫০ টিরও বেশি কর্মচারীর জন্য ৬ হাজার দিনের কর্মসংস্থান তৈরি করেছে৷ এই পরিসংখ্যাগুলি নিয়ে আমরা গর্বিত এবং আমাদের আরও ভাল কাজ করতে অনুপ্রাণিত করে।”

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *