আজ খবর ডেস্ক : তালিবান নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, আফগানিস্তান অন্য যে কোন দেশ, এমনকি ভারতের সঙ্গেও কোনরকম সংঘাত চায় না। বিবিসি উর্দু নামক সংবাদসংস্থার সাথে কথা বলার সময় মুত্তাকি এমন মন্তব্য করেন। এটি একজন মহিলা সাংবাদিকের সাথে তাঁর করা প্রথম সাক্ষাৎকার। যেখানে তাঁকে তালেবান অধীনস্থ আফগানিস্তান ও নয়াদিল্লির মধ্যেকার সম্পর্ক প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হয়েছিল। তিনি বলেন, “আমরা চাই না আফগানিস্তানের সঙ্গে অন্য কোনো দেশের বিরোধ থাকুক। বা এই ধরনের বিষয় আমাদের দেশের পক্ষে কোনরকম প্রতিকূলতা তৈরি করুক। তাই আমরা এই ইস্যুতে কাজ চালিয়ে যাব।”

আফগানিস্তানের সাথে ভারতের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক নিয়ে চীন বা পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া কি তা জানতে চাওয়ায় সরাসরি কোন উত্তর দেননি। বরং মুত্তাকি সম্প্রতি মস্কোতে হওয়া বৈঠকের কথা উল্লেখ করেন। বলেন, “আমরা যখন মস্কো সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেছিলাম, তখন ভারত, পাকিস্তান এবং অন্যান্য দেশের প্রতিনিধিরাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তখন আমাদের মধ্যে একটি ইতিবাচক কথোপকথন হয়। আমরা আশা রাখি যে, আমরা কোনও দেশের বিরোধিতা করব না।”

কিছুদিন আগেই জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল নয়াদিল্লিতে আফগানিস্তান প্রসঙ্গে ৮ টি দেশকে নিয়ে বৈঠক করেছেন। যেখানে ইরান, কাজাখস্তান, কিরগিজ প্রজাতন্ত্র, রাশিয়া, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান এবং উজবেকিস্তানের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। তার ঠিক পরই এই সাক্ষাৎকার প্রকাশ্যে আসে।

বৃহস্পতিবারের বৈঠক শেষে অংশগ্রহণকারী দেশগুলি আফগানিস্তানের উদ্দেশ্যে কড়া বার্তা দিয়েছিল। যেখানে বলা হয়, আফগানিস্তান যাতে কোন ভাবেই বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসবাদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল না হয়ে ওঠে। বলা হয় তালিবান সরকার যেন এই বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য প্রতিশ্রুতি দেয় এবং কাবুলে একটি “উন্মুক্ত এবং সত্যিকারের অন্তর্ভুক্তিমূলক” সরকার গঠন করে। বৈঠকের শেষে নয়াদিল্লি থেকে প্রকাশিত একটি বিবৃতিতে বলা হয় যে, আফগান ভূখণ্ডকে কোনভাবেই কোন সন্ত্রাসমূলক কর্মকাণ্ডের আশ্রয়, প্রশিক্ষণ, পরিকল্পনা বা অর্থায়নের জন্য যেন ব্যবহার না করা হয়। সেখানকার কর্মকর্তারা যেন আফগানিস্তানে একটি শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ এবং স্থিতিশীল আবহ তৈরি করতে সচেষ্ট হন।

৯/১১ হামলার পরই মার্কিনযুক্তরাষ্ট্র দ্বারা আফগানিস্তান থেকে তালিবান ক্ষমতা উৎখাত করা হয়। এরপর চলতি বছরের আগস্ট মাসে আফগানিস্তানে ক্ষমতা পুনর্দখল করে তালিবানরা। সাথেই পশ্চিমী মদতপুষ্ট পূর্ববর্তী নির্বাচিত সরকারেরও উচ্ছেদ ঘটিয়ে দেয় তাঁরা।

নারী শিক্ষার বিষয়ে প্রশ্ন করায়, মুত্তাকি জবাবে সেখানকার নারীদের বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে মহিলাদের সরিয়ে রাখার অভিযোগকে অস্বীকার করেন।তিনি বলেন, “স্বাস্থ্য খাতে নারীদের ১০০ শতাংশ অন্তর্ভুক্তি রয়েছে। তারা শিক্ষাক্ষেত্রেও অংশগ্রহণ করছেন। তারা এমন প্রতিটি ক্ষেত্রেই কাজ করছে, যেখানে তাদের প্রয়োজন রয়েছে।” সেই সঙ্গে তিনি আরও বলেন , নতুন তালেবান সরকার সেখানে আগের সরকারের অধীনে কর্মরত কোনো মহিলা কর্মীকেই বরখাস্ত করেনি।

তিনি অবশ্য , এই বিষয়টি স্বীকার করেছেন যে, কিছু অঞ্চলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখনও বন্ধ রয়েছে। তবে জানান, সেটি কোভিড অতিমারীর কারণে বন্ধ রয়েছে। তবে সাক্ষাৎকারের দরুন ওই তালেবান নেতা স্বীকার করে নেন যে, আফগানিস্তান পাকিস্তান এবং নিষিদ্ধ তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের (টিটিপি) মধ্যে মধ্যস্থতা করছে। কিন্তু এই বিষয় এখনও পর্যন্ত কোনো চুক্তিতে পৌঁছানো যায়নি। তবে প্রক্রিয়াটি ইতিবাচক ভাবে শুরু হয়েছিল বলে জানান। সাথেই বলেন, আপাতত মাসব্যাপী তাদের মধ্যে যুদ্ধবিরতির কথা ঘোষণা করা হয়েছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *