আজ খবর ডেস্ক : ধনতেরস এলেই সোনা প্রিয় বাঙালির মন যেন জেগে ওঠে! একটা ছোট্ট পেন্ডেন্টই সই। তবুও কিছু একটা কেনা মাস্ট ! আর এই ভাবনা বোধহয় ৭ থেকে ৭০ প্রায় বয়সের নারীই। বিশেষ করে রুপোলি পর্দার তারকারা। গয়নার দোকানে যদিও সারা বছরই তাঁদের যাতায়াত লেগে থাকে। তবু ধনতেরাসের দিন দেবীর আশীর্বাদে সমৃদ্ধি ঘরে আনতে তাঁদের নতুন গয়না চাইই। তেমনই সুদীপা চট্টোপাধ্যায় নিজের কয়েকটি রুপোর গয়নাকে নতুন করে সোনায় গড়িয়েছেন। রফিয়াদ রশিদ মিথিলার হাতে সোনার কাঁকন, সায়ন্তনী গুহ ঠাকুরতা কিনেছেন সোনার কবজি-বন্ধ (রিস্টলেট)। ব্যতিক্রমী শুধু অপরাজিতা আঢ্য আর স্বস্তিকা দত্ত।

কিন্তু ধনতেরস কি অদেও বাঙালির উৎসব? এই নিয়ে যথেষ্ট মতভেদও রয়েছে। যেমন সুদীপা চট্টোপাধ্যায়ের মতে, ধনতেরস বণিক সম্প্রদায়ের তৈরি করা প্রথা। যা যথেষ্ট বিজ্ঞানসম্মত। ভারতে নাকি বহুযুগ ধরে নারীরা সে ভাবে উপার্জনশীল ছিলেন না। তাই স্ত্রী ধন বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে এই বিশেষ দিনটিকে বেছে নেওয়া হয়। সেই দিনে বাড়ির সমস্ত মেয়েরা তাঁদের সামর্থ্য এবং পছন্দ অনুযায়ী সোনা, রুপো, দামি রত্ন কিনে থাকেন। এ ভাবেই গৃহস্থের ঘরে ঘরে দিনটিকে উপলক্ষ করে গয়না কেনার রীতি চালু হয়। এই রীতিকে সুদীপা আন্তরিকভাবে সমর্থনও করেন বলে জানিয়েছেন। সঞ্চালিকা-অভিনেত্রীর সিন্দুকে ইতিমধ্যেই হরেক রকম গয়না রয়েছে। সে বিষয়ে তিনি জানিয়েছেন, ‘‘নিছক গয়না কেনা আমার শখ নয়। আমি চেষ্টা করি সাবেকি গয়না পরতে। অথবা যে গয়নার পিছনে কিছু ইতিহাস আছে।’’ ক্রমশ সোনার দাম আকাশছোঁয়া হচ্ছে। সাথেই মধ্যবিত্ত এবং উচ্চমধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে সোনা। তাই তাঁর পরামর্শ, সব সময় এক গা ভর্তি গয়না পড়ার কোনও প্রয়োজন নেই। কানে ভারী কিছু পরে গলা ফাঁকা রাখলে বা গলায় ভারী কিছু থাকলে কান ফাঁকা রাখলেও মন্দ দেখায় না। এতে গয়নার সংখ্যা কমে সাথেই সাধ্যের সঙ্গে সাধও পূরণ হয়।

যুগের পর যুগ পেরিয়ে গেলেও অলঙ্কার আর নারীর মধ্যে যে পরিপূরক সৌন্দর্য রয়েছে তার অন্যতম উদাহরণ মিথিলা। সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের স্ত্রী এদিন দু’রকম শাড়ির সঙ্গে পরার জন্য দু’রকমের গয়না বেছে নিয়েছেন। একটি গয়নার সাথে তিনি গাঢ় বিট রঙের বালুচরি শাড়ি বেছে নিয়েছেন। ওই জমকালো শাড়ির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মিথিলার পছ্ন্দ হাল্কা সোনার গয়না। যা আধুনিক অথচ অভিজাত। সেই অনুযায়ী রয়েছে তাঁর গলায় নেকলেস, কানে ঝুমকো, হাতে মেশিন কাটের কয়েক গাছা চুড়িও। তার পর সেই মিথিলাকেই লাল পাড় সাদা শাড়িতে কপালে সিঁদুর টিপ দিয়ে, হাতে মোটা বালা, কানে পাশা, গলায় লহরি হার পড়ে সাবেকি সাজে দেখা যায়।

H

নিজের গয়নার প্রতি দুর্বলতার কথা ফাঁস করেছেন সায়ন্তনী। বলেন ‘‘প্রতি বছর আমি আর মা মিলে কিছু না কিছু কিনবই। মা বিশ্বাস করেন, এ দিন সোনা কিনলে নাকি সংসারে সমৃদ্ধি আসে। আমিও এ কথা মানি। এ বার যেমন কব্জি-বন্ধ কিনেছি। মা কিনেছে লকেট।’’ যদিও সায়ন্তনীর ইচ্ছে ছিল হিরের ‘এস’ লেখা পেনডেন্ট কেনার কিন্তু ডিজাইন পছন্দ না হওয়ায় নতুন করে বানাতে দিয়েছেন।

প্রতি বছর নিয়ম করে সোনা কেনেন স্বস্তিকা দত্ত। জানিয়েছেন, ‘‘মায়ের জন্য আর বাড়ির দেবী লক্ষ্মীর জন্য গয়না কিনি। কোনও বার মাকে হাতের বালা গড়িয়ে দিই। কোনও বার কানপাশা বা অন্য কিছু। দেবী প্রতিমার জন্য গয়নাও কিনি। রুপোর বাসনও কিনি। তবে নিজের জন্য তেমন কিছু কেনা হয় না।’’ এবছর কিছু পারিবারিক কারণে অভিনেত্রী ধনতেরস উদযাপন থেকে দূরে। হাল্কা বিষণ্ণতার সুরে জানিয়েছেন, আগামী বছর সব ঠিক থাকলে, ফের তিনি পা রাখবেন অলঙ্কার বিপণিতে।

অপরাজিতার এ বছর গয়না না কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কারণ এ বছর বড় পর্দার ‘মিষ্টি’ টাকা জমিয়েছেন ইয়াস ঝরে ক্ষতিগ্রস্ত দুর্গতদের জন্য। এ বছর তিনি তাই নিজেকে না সাজিয়ে সাজাবেন বিপর্যস্তদের। অপরাজিতার কথায়, ‘‘গত বছরেও ধনতেরাসে কিছু কিনতে পারিনি। অতিমারি কাবু করে ফেলেছিল।’’ এই দুই বছর ব্যতিক্রম। নইলে অপরাজিতা নিয়ম করে প্রতি বছর টাকা জমিয়ে নিজের জন্য ও দেবী দুর্গার জন্য গয়না কেনেন। কোন ধরনের গয়না বেশি পছন্দ তাঁর? ‘‘অবশ্যই সোনার গয়না। কারণ, সোনার গয়নার বিকল্প নেই’’, দাবি অভিনেত্রীর। একই সঙ্গে জানালেন সাধ্যের মধ্যে যা কিনতে পারেন তাতেই খুশিমনে নিজেকে সাজান।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *