আজ খবর ডেস্ক- ভ্রমণ করতে কে না ভালোবাসেন? পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়া যাবে এমন অসংখ্য মানুষ যারা প্রতি বছর নিয়মিত বেড়াতে যান দেশে এবং দেশের বাইরে প্রধানত পেশাগতভাবে বেড়ানোই যাদের কাজ এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া বিরল নয়। তবে সত্য একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে মানুষ বেড়াতে পছন্দ করেন বিভিন্ন কারণে।

কার্ড সেবা ও ট্রাভেলার চেকের জন্য বিশ্ব বিখ্যাত আমেরিকান এক্সপ্রেস বিশ্বের আট হাজার ভ্রমণকারীকে নিয়ে একটি সমীক্ষা চালিয়েছে। গ্লোবাল ট্রাভেলার ট্রেন্ডস নামে ২০২১ সালের ওই সমিক্ষ্যায় দেখা যাচ্ছে, ৬৮ শতাংশ পর্যটক আরও টেকসই ভ্রমণের পক্ষে। পাশাপাশি, ৭৮ শতাংশ মানুষ বলছেন, মানসিক চাপ কমাতে তাঁরা ভ্রমণ করেন। আগের চেয়ে দীর্ঘ সময় নিয়ে ধীরসুস্থে ভ্রমণের পক্ষে ৬১ শতাংশ মানুষ। অর্থাৎ কারণ ভিন্ন হলেও বেড়াতে যাওয়াই একমাত্র লক্ষ্য এইসব মানুষের জন্য।

বেলমন্ড ইস্টার্ন অ্যান্ড ওরিয়েন্টাল এক্সপ্রেস

প্রথমে প্যারিস ও ইস্তাম্বুলের মধ্যে চলাচল করত এই ট্রেন। ১৮৮৩ সালে রেলপথটি চালু হয়, এর পর থেকেই বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এটি। ১২৬ বছর ধরে চলার পর ২০০৯ সালে দীর্ঘ সময়ের এই ট্রেনভ্রমণ অবশ্য বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ট্রেনের বগিগুলো কিনে নেয় বেলমন্ড হোটেল গ্রুপ। এই কোচগুলো বর্তমানে চলাচল করে ব্যাংকক থেকে সিঙ্গাপুরে। চার দিনের যাত্রা করে এই ট্রেন। চমৎকার ও সুস্বাদু খাবার, প্যানারোমিক জানালা, সুদর্শন চেরি কাঠের দেওয়াল ও মালয়েশিয়ান সিল্ক এমব্রয়ডারির জন্য ট্রেনটিকে চলমান একটি হোটেল বলে মনে করা যেতে পারে। ট্রেনের পিছনে পর্যবেক্ষণের জন্য মালবাহী গাড়ি এর আরেকটি বিশেষত্ব।

সেভেন স্টারস, কিউসু, জাপান

জাপানে যদি মনোমুগ্ধকর ও বিলাসবহুল ট্রেন পরিষেবা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে, তাহলে অন্য ট্রেনগুলো থেকে এগিয়ে থাকবে সেভেন স্টারস। সেভেন স্টার অনেক ধীরগতির ট্রেন। এই ট্রেনে চেপে কিউশু দ্বীপের সাতটি এলাকায় পাহাড় ও সমুদ্র দেখার সুযোগ পান ভ্রমণকারীরা। কিউশু দ্বীপ দক্ষিণে অবস্থিত। যাকে বলা হয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ভান্ডার। এই ট্রেনের যাত্রাপথও চার দিনের জাপানি আদলে তৈরি ট্রেনটিকে মনে হয় শিল্প ও কারুশিল্পের জীবন্ত জাদুঘর। প্রতিটি যাত্রায় ২৬ জন যাত্রী নিয়ে চলাচল করতে পারে এই ট্রেন। ট্রেনটির মোট পাঁচটি কোচে রয়েছে বিলাসবহুল পাঁচটি স্যুট। ট্রেনের একেবারে পেছনের দিকে থাকা এসব কেবিনে বসে প্যানারোমিক দৃশ্য দেখার সুযোগ রয়েছে ভ্রমণকারীদের।

ক্যানডি থেকে এল্লা, শ্রীলঙ্কা মেইন লাইন

শ্রীলঙ্কার একসময়ের রাজ্য ক্যান্ডি এবং এলার মধ্যে চলাচল করে শ্রীলঙ্কা মেইন লাইন নামের একটি ট্রেন। এলার উৎপত্তি শ্রীলঙ্কার দক্ষিণের একটি পাহাড়ি গ্রামের নাম থেকে। ভ্রমণ উপভোগ্য হতে পারে। প্রথম শ্রেণির কোচগুলো উজ্জ্বল নীল রঙের। ট্রেনে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাও রয়েছে। সঙ্গে রয়েছে প্যানারোমিক দৃশ্য দেখার জন্য দারুণ কিছু জানালা। সবুজ দৃশ্য, পাথরের তৈরি সেতু, সমুদ্রের সঙ্গে পাহাড়ের মিল, জঙ্গলের দৃশ্য দেখার ব্যবস্থা রয়েছে এই ট্রেনটিতে। তবে প্রথম শ্রেণির তুলনায় দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির কামরায় একটু বেশি ভিড় হয়ে থাকে। কিন্তু এসব কেবিনেও খোলা ট্রেনের দরজায় পা ঝুলিয়ে অপূর্ব সব দৃশ্য দেখা যায়। টিকিটের দাম মাত্র দশমিক ৮ ডলার থেকে ২০ ডলার।

প্যালেস অন হুইলস, রাজস্থান, ভারত

ভারতের রাজস্থানের প্যালেস অন হুইলস একেবারে অন্য একটি রেল পরিষেবা। পর্যটকদের জন্য আকর্ষণ করার জন্যে এটি চালু হয়েছিল ১৯৮২ সালে। ট্রেনটি স্বাধীনতার আগে রাজস্থানের রাজপরিবারের সদস্যরা ব্যবহার করতেন বলে জানা গিয়েছে। অবশ্য পুরোনো কোচগুলো এখন আর নেই। ২০০৯ সালে সংস্কার করে আরও আধুনিকায়ন করা হয়েছে। সিল্ক ও চকচকে কাঠের তৈরি দেওয়াল, বিশেষ পর্দা রয়েছে প্রতিটি কামরায়। এ ছাড়া রয়েছে অলংকৃত আসবাবপত্র ও রুপার থালাবাসন।
খাবার পরিবেশনের জন্য প্যালেস অন হুইলসে রয়েছে পৃথক দুটি কামরা। রাজকীয় একটি স্পা ছাড়াও রয়েছে একটি বার ও একটি করে লাউঞ্জ। বিলাসবহুল ভ্রমণের অভিজ্ঞতার জন্য এই ট্রেনে সবই রয়েছে। ট্রেনটিতে অতিথিদের জন্য রয়েছে ১৪টি বগি। পূর্বের প্রিন্সলি স্টেট বিভিন্ন অঞ্চলের নামের সঙ্গে মিল রেখে প্রতিটি কোচের নামকরণ করা হয়েছে। যখন ট্রেনটিতে থাকার জন্যে পাঁচ তারা হোটেলের খরচ লাগে।

আলিশান ফরেস্ট রেলওয়ে, সেন্ট্রাল তাইওয়ান

তাইওয়ানের বিখ্যাত রেল পরিষেবার সবচেয়ে সুন্দর রুটগুলোর মধ্যে একটি আলিশান ফরেস্ট রেলওয়ে। শতাব্দী প্রাচীন এই ট্রেনলাইন প্রথমে গাছ-কাঠ পরিবহনে ব্যবহৃত হতো। ১৯৩৩ সালে পর্যটনের জন্য এটি ফের চালু করা হয় সর্বসাধারণের জন্য। ডিজেলচালিত ট্রেনটি মধ্য তাইওয়ানের চিয়াই শহর থেকে ৪৪ মাইল দূরের আলিশান পাহাড়ে চলাচল করে। এর মধ্যে তাইওয়ানের সবচেয়ে উঁচু স্টেশন চুশান রয়েছে।
ট্রেনটির যাত্রাপথ তিন ঘণ্টার। এই যাত্রাপথে ৫০টির বেশি সুড়ঙ্গ, ৭৫টি সেতু, নদী, জলপ্রপাত, ঘন বনভূমি ও কুয়াশাচ্ছন্ন পাহাড়ের চূড়ার দেখা মেলে।

দ্য ভিয়েটাজ, ভিয়েতনাম

ভিয়েতনামের বিখ্যাত রিইউনিফিকেশন এক্সপ্রেস পর্যটকদের কাছে পরিচিত নাম। দেশটির রাজধানী শহর হ্যানয়ের সঙ্গে দক্ষিণে হো চি মিন শহরের মধ্যে সংযোগকারী এই রেলপথের দূরত্ব এক হাজার মাইল। মোট ৩০ ঘণ্টার যাত্রাপথ এটি। পথে রয়েছে হাই ভ্যান পাস, ল্যাং কো-এর সমুদ্রসৈকত আর বিস্তীর্ণ প্রাকৃতিক দৃশ্য। ভ্রমণকারীদের জন্য আরামদায়ক সফরের ব্যবস্থা রয়েছে ভিয়েটাজ ট্রেনে। এজন্য অবশ্য গুনতে হবে ৩৫০ মার্কিন ডলার।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *