আজ খবর ডেস্ক- গতকাল অর্থাৎ সোমবার ভারতীয় সময়ে রাত ৯.০৭ মিনিট থেকে মঙ্গলবার মধ্যরাতে প্রায় ৩.৪৫ পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে হঠাৎই স্তব্ধ হয়ে যায় ফেসবুকসহ ফেসবুকের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম ও মেসেঞ্জার। প্রথমদিকে বিষয়টি বোঝা না গেলেও একমাত্র টুইটার কাজ করায় পরবর্তী সময়ে টুইটার থেকে এই অসুবিধার কথা জানতে পারেন ব্যবহারকারীরা।
এই বিভ্রাট শুরু হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই হোয়াটসঅ্যাপ এর তরফ থেকে টুইটারে জানানো হয়, ‘ এই মুহূর্তে বেশ কিছু মানুষের হোয়াৎসঅ্যাপে যে বিপত্তি দেখা দিয়েছে সে বিষয়ে আমরা অবগত । তবে আমরা পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছি। এই নিয়ে যত শীঘ্র সম্ভব আপডেট দেওয়া হবে।’ তারপর সমস্যা কেটে যাওয়ার পর হোয়াটসঅ্যাপ এর তরফ থেকে আবারো এই বিপত্তি নিয়ে দুঃখপ্রকাশ করে বলা হয় ‘ যারা আজকে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করতে পারছেন না তাদের কাছে ক্ষমা চাইছি। আমরা ধীরে ধীরে এবং সাবধানে হোয়াটসঅ্যাপের কাজ শুরু করেছি। ধৈর্য ধরার জন্য আপনাদের প্রত্যেককে অনেক ধন্যবাদ। আমরা এই আপডেট করা চালিয়ে যাব।’ তবে শুধু হোয়াৎসঅ্যাপই নয় ফেসবুকের তরফ থেকেও বিষয়টি নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করা হয়।
কিন্তু প্রশ্ন হলো কেন এই ঘটনা ঘটেছিল?
এর মূল কারণ ছিল ফেসবুকের DNS (Domain Name System) সিস্টেম এর সমস্যা। সাধারনত একটি কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেম কাজ করে কতগুলো আইপি (ইন্টারনেট প্রোটোকল) এর উপর ভিত্তি করে অর্থ্যাৎ একটি কম্পিউটার যখন অন্য একটি কম্পিউটারের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে তখন একে অপরকে চিনে থাকে আইপি এড্রেসের মাধ্যমে । একইভাবে আমরা যখন ইন্টারনেটে কোন ওয়েবসাইট কিংবা সার্ভারে প্রবেশ করি তখনও মূলত উক্ত সার্ভারে প্রবেশ করি তার নির্ধারিত আইপি অ্যাড্রেসের মাধ্যমে। প্রত্যেকটা সার্ভারের একটি নির্দিষ্ট ইন্টারনেট আইপি থাকে যেটা হয় ইউনিক (মোবাইল নাম্বারের মতো , অন্য কারও সাথে মিলবে না)। যেমন ফেসবুকের অনেকগুলো আইপি এর মধ্যে একটি হলো- 63.69.176.13, কিন্তু একজন সাধারন মানুষের পক্ষে এত আইপি এড্রেস কখনোই মনে রাখা সম্ভব নয়, তাই এর সহজ সমাধানে ব্যবহৃত হয় DNS (Domain Name System) । যার কাজ হচ্ছে আইপি এড্রেসকে নামে রূপান্তরিত করা। উদাহরন হিসেবে বলা যায়, আমরা যখন facebook.com লিখি তখন এই DNS প্রযুক্তি প্রথমে খুজে বের করে Facebook.com এর সার্ভারের আইপি এড্রেস কি, তারপর facebook.com আর উক্ত সার্ভার আইপি এড্রেসের সাথে সংযোগ স্থাপন করে আমাদেরকে সারভার পর্যন্ত পৌছে দেয়, ঠিক একইভাবে আমরা যখনই কোন ওয়েবসাইটে প্রবেশ করি প্রত্যেক ক্ষেত্রেই এই একই পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়, আমাদেরকে কষ্ট করে আইপি মনে রাখতে হয় না শুধু ওয়েবসাইটের ঠিকানাটা মনে রাখলেই হয়।
এবার প্রশ্ন থাকতেই পারে ফেসবুকের DNS সমস্যা হলে whatsapp আর instagram এও কেন এর প্রভাব পড়বে? এর উত্তর হলো – facebook, instagram & whatsapp এদের সবার ডাটাই থাকে একটি সার্ভার সিস্টেমে এবং ব্যাকইন্ডে ডাটাবেস কানেক্টিভিটি এর ক্ষেত্রে সবাই ফেসবুকের DNS সিস্টেম (facebook.com) ব্যবহার করে, তাই ফেসবুকের DNS সমস্যা, হওয়াতে বাকিদেরও একই সমস্যা হয়েছে।
শুধুমাত্র ভারতেই হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৫৩ কোটি। ফেসবুক ব্যবহার করেন ৪১ কোটি ভারতীয়। বিশ্বজুড়ে হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম একসঙ্গে ক্ষণিকের অকেজো হয়ে পড়াতে, সোশ্যাল মিডিয়াতে নির্ভরশীল মানুষেরা তার জেরে কিছু সময়ের জন্য রীতিমত দিশেহারা হয়ে পড়েছিল। একজন ব্যাক্তি অবশ্য এই বিভ্রাট নিয়ে টুইটারে লেখেন , এই নেটওয়ার্ক বিভ্রাট কিছু সময়ের জন্য ভার্চুয়াল জগত থেকে সরিয়ে মানুষকে আসল জগতে ফিরিয়ে আনছে। প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে যেভাবে আমাদের মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ার উপর নির্ভরশীলতা বেড়ে চলেছে তাতে , একমুহূর্তও কোন সোশ্যাল প্লাটফর্ম ছাড়া আমরা সত্যিই যেন অচল হয়ে পড়ি। আর এই ভার্চুয়াল জগতের সঙ্গে আমাদের ক্রমশ তৈরি হওয়া নৈকট্য, কোথাও গিয়ে আসল জগতের সঙ্গে আমাদের দূরত্ব তৈরি করে। যদিও এই নেটওয়ার্ক বিভ্রাটের জেরে বহু মানুষের কাজের ক্ষতি হয়েছে। তবুও সত্যিই কিছুক্ষণের জন্য মানুষের ভার্চুয়াল আসক্তি থেকে মিলেছে ক্ষণিকের নিস্তার।