কোভিড অতিমারি পরিস্থিতিতে গত বছর রাজ্যে সংক্রমণের হার অনেকটাই বেড়ে গিয়েছিল। যে কারণে রাজ্য জুড়ে সরকারি হাসপাতালগুলিতে বেডের আকাল দেখা দেয়। সেই সময় রাজ্য সরকারের তরফ থেকে কিছু বেসরকারি হাসপাতালকে অস্থায়ী রূপে সরকারি আওতায় আনা হয়েছিল। আর সেই হাসপাতাল গুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, বিনামূল্যে করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা করবার। সেক্ষেত্রে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় যে, সমস্ত ব্যবহার বইবে সরকার।

রাজ্যের তেমনই একটি হাসপাতাল ছিল হাওড়ার ফুলেশ্বরের হাসপাতালটি। করোনাকালে এই বেসরকারি হাসপাতালটিকে অধিগ্রহণ করে রাজ্য সরকার। তারপর তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, শুধুমাত্র রাজ্য সরকারের পাঠানো কোভিড রোগী ছাড়া, আর অন্য কোনও রোগীকে যাতে ওই হাসপাতালে ভর্তি করা না হয়। এমনকি রোগীদের কাছ থেকেও কোন রকম টাকা নিতে মানা করা হয়। জানানো হয় রাজ্যই সব বিল মেটাবে। কিন্তু তারপর অনেকটা সময় পেরিয়ে গেছে। সম্প্রতি ওই হাসপাতালের তরফ থেকে অভিযোগ করা হয় যে, প্রথম দফাতেই প্রায় ১৩০ কোটি টাকা বিল হয়েছিল সেখানে। তার মধ্যে ৫৯ কোটি টাকা নিয়ে নানা অজুহাত দেখিয়ে সরকার ওই হাসপাতালকে সেই টাকা আর ফেরত দিতে চাইছে না। তাই বকেয়া টাকা আদায় করতেই এবার কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে হাওড়ার ওই হাসপাতালটি।

আদালত সূত্রের খবর অনুযায়ী, ২০২০ সালের ৩১ মার্চ বিপর্যয় মোকাবিলা আইনে ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট বেসরকারি হাসপাতালটিকে সাময়িককালের জন্য অধিগ্রহণ করেছিল রাজ্য সরকার। সঙ্কটজনক রোগীদের চিকিৎসা করানোর জন্যই ওই হাসপাতালটিকে নির্বাচিত করা হয়। কিন্তু রোগীর চিকিৎসা হলেও কোনো টাকা দেওয়া হচ্ছিল না। হাসপাতালটি অলাভজনক সেবামূলক প্রতিষ্ঠান হওয়ায় তাঁদের আর্থিক সঙ্কট দেখা দেয়। হাসপাতালের দাবি, তা সত্ত্বেও রাজ্য সরকারের অনুরোধে অতিমারি সামলাতে আরও ২০০ শয্যা বৃদ্ধি করার ব্যবস্থা করেছিল তারা। হাসপাতালের তরফে জানানো হয়েছে, সব মিলিয়ে প্রায় ১৩০ কোটি টাকা বিল হয়েছিল। বহু অনুনয়- বিনয়ের পর রাজ্য হাসপাতালটিকে প্রায় ৬০ কোটি টাকা দিতে সম্মত হয়েছিল বলেও জানানো হয়েছে।

সূত্রের খবর, অতিমারির সময় স্বাস্থ্য দফতরের পর্যবেক্ষক দল নিয়মিত ওই হাসপাতালের চিকিৎসা এবং বিলের উপরে নজরদারি রাখার সত্ত্বেও পরবর্তী সময় হাসপাতালটি টাকার দাবি করলে সরকার সেখানে অডিটর নিয়োগ করে। সেই রিপোর্টেও ন্যায্য বিলই এসেছে বলে জানানো হয়। গত জানুয়ারি মাসে হাসপাতালটিকে বন্ধনমুক্ত করেছে রাজ্য। তবে প্রাপ্ত টাকা না মেলায় এখন রীতিমত বকেয়ার ভারে ধুঁকছে হাসপাতালটি।জন সাধারণের মত, এমন ভাবে কোনও হাসপাতাল আর্থিক সঙ্কটে ভুগলে চিকিৎসা পরিষেবা ব্যাহত হয়। আর তার জন্য খেসারত ভুগতে হয় আমজনতাকেই।ওই হাসপাতালের বলা হয়েছে, নবান্নের তরফ থেকে ন্যায্য বিল মেনে নিয়ে টাকা ফেরত দেওয়ার পদ্ধতি বিচার করার জন্য একটি বিশেষ কমিটি নিয়োগ করার কথা বলেছিলেন। কিন্তু তার পরও টাকা ফেরত পায়নি তারা। শেষমেশ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ হাইকোর্টের দ্বারস্থ হলে, রাজ্যের তরফ থেকে আদালতে পাল্টা দাবি করা হয় যে, তারা নাকি বেশি টাকা চাইছে। তাই নতুন একটি কমিটি তা খতিয়ে দেখবে। আদালতের নির্দেশে ওই হাসপাতালের আইনজীবী দীপন সরকার-সহ অন্যান্য কর্তারা ইতিমধ্যেই কমিটির কাছে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখান থেকেও খালি হাতে ফিরতে হয় তাদের।

আদালত সূত্রের দাবি, এ ভাবেই টালবাহানা চলছিল। প্রথমে বিচারপতি দেবাংশু বসাক এই মামলাটির বিচার করছিলেন। তিনি রাজ্যের কাছে এই বিষয় রিপোর্টও চেয়েছিলেন। তারপর পুজোর ছুটির আগে মামলাটি বিচারপতি শিবকান্ত প্রসাদের এজলাসে স্থানান্তরিত হয়। তিনি শুনানির পর রাজ্য সরকারের কাছে হলফনামা চেয়ে পাঠান। পুজোর ছুটির মধ্যে তা জমা দেওয়ার কথা রয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত রাজ্যের তরফ থেকে হলফনামা জমা পড়েনি বলেই জানিয়েছে আদালতে ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *