আজ খবর ডেস্ক- দিনটা ২০১৯ সালের ৫ ই আগস্ট। ৩৭০ ধারা রদ করে জম্মু কাশ্মীরের বিশেষ বিশেষ রাজ্যের ক্ষমতা কেড়ে নেয় কেন্দ্র। সেইসময় এই নিয়ে ক্ষোভের আশঙ্কায় বিপুল সেনা নামিয়ে কাশ্মীরকে শান্ত রাখার চেষ্টাও করেছিল কেন্দ্র। এরপর গত শনিবার প্রথম ৩ দিনের সফরে উপত্যকায় পারি দেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সফরের মধ্যেই কাশ্মীরিদের উদ্দেশ্যে বড়সড় আশ্বাসের বার্তা শোনা গেল অমিত শাহের গলায়।

শনিবার শ্রীনগরে জম্মু ও কাশ্মীর ইয়ুথ ক্লাবের সদস্যদের এক অনুষ্ঠানে অমিত শাহ বলেন, “ডিলিমিটেশন রুখে দেওয়ার দাবি উঠছে। কিন্তু কেন তা স্থগিত করে দেওয়া হবে? এটা করলে রাজনীতির ক্ষতি হবে? দেখুন, কাশ্মীরে এসব আর হবে না। কাশ্মীরের তরুণদের সুযোগ করে দিতে লিমিটেশন হবে, তার পর নির্বাচন হবে। নির্বাচনের পর জম্মু ও কাশ্মীরের স্বতন্ত্র রাজ্যের মর্যাদাও ফিরিয়ে দেওয়া হবে। দেশের সংসদে দাঁড়িয়ে আমি এই কাথা বলেছি। এটাই আমাদের পরিকল্পনা। আমাদের উদ্দেশ্যই হল কাশ্মীরি তরুণদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা। “

নির্বাচন প্রসঙ্গে বিরোধীদের আক্রমণ করে শাহ বলেন – জম্মু – কাশ্মীরে একেবারে তৃণমূল স্তর থেকেও যে কোনো ব্যাক্তি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার লক্ষ্য তৈরি করতে পারে। সেক্ষেত্রে তিন পরিবারের দাদাগিরি এখন চলবে না। এখানে তিন পরিবার বলতে উপত্যকার প্রধান তিন বিরোধী দল কংগ্রেস, ন্যাশনাল কনফারেন্স, ও পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টিকে আক্রমণ করেন তিনি। এই উদ্যোগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর অবদান উল্লেখ করতে গিয়ে তিনি বলেন – “প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জম্মু কাশ্মীরে তৃণমূল স্তর থেকে রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্বের ভিত্তি স্থাপন করতে চেয়ে, ৭০ বছরে প্রথমবার ৩০ হাজার পঞ্চ ও সরপঞ্চ নির্বাচন করেছেন এবং তহশিল ও জেলা-স্তরের নির্বাচন অনুষ্ঠিত করেছেন।”

গত দু ‘বছরে প্রথমবার জম্মু – কাশ্মীরের জনগণের মুখোমুখি হয়ে সেখানে রাজ্যের উন্নয়ন প্রসঙ্গে শাহ বলেন, ” এখানকার প্রতিটি মানুষের ঘরে ঘরে গ্যাস সরবারহ করা হবে। কাশ্মীরের কথা বলতে গিয়ে এর সঙ্গে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের তুলনা টানলে চলবে না। গত ২ বছরে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা কমেছে, রাস্তায় পাথর নিক্ষেপের মতো ঘটনা আর দেখা যায় না। এখানকার নিরাপত্তা পরিস্থিতি দেখে ভালো লাগছে। আর যারা কাশ্মীরের শান্তি নষ্ট করতে চায় তাদের বিরুদ্ধেও কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। “

মূলত উপত্যকায় বেড়ে চলা সন্ত্রাসমূলক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করতেই সেখানে তিন দিনের সফরে পৌঁছান শাহ। সফরের পৌঁছে জঙ্গি হামলায় মৃত পুলিশ কর্মী পারভেজ আহমেদ দার – এর পরিবারের সাথে দেখা করে তাদের পাশে থাকার আশ্বাস দেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। প্রথম দিনই শ্রীনগরের রাজভবনে নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা বিভাগের কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। সেই কর্মসূচির দরুন তিনি বলেন , “২০০৪ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে প্রতি বছর প্রায় ২০৮ জন করে ব্যাক্তিকে খুন করা হয়। ২০০৪ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে ২০৮১ জনকে, আমরা প্রাণ হারাতে দেখেছি। ২০১৪ থেকে ২০২১ এর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২৩৯ জন মানুষ তাদের জীবন হারিয়েছে। তাই আমরা এখনও পর্যন্ত সন্তুষ্ট নই । কারণ আমরা এমন পরিস্থিতি তৈরি করতে চাই যেখানে কাউকে এভাবে অসময় নিজেদের জীবন দিতে হবে না এবং সন্ত্রাসবাদ সম্পূর্ণভাবে শেষ হয়ে যাবে। কেন্দ্র জম্মু ও কাশ্মীরের মানুষের জীবন রক্ষার্থে এবং সন্ত্রাসবাদের অবসান ঘটাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”

জানা গিয়েছে সফরে শাহের নিরাপত্তায় মোতায়েন করা হয়েছে ড্রোন, স্নাইপার ও শার্পশুটার।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *