আজ খবর ডেস্ক : সংরক্ষণে গাফিলতি ! ভেঙে পড়ল ঐতিহ্যবাহী হুগলি ইমামবাড়ার একাংশ। ঘটনার খবর পেয়েই তড়িঘড়ি এলাকা পরিদর্শনে যান সেখানকার বিধায়ক ও পুর প্রশাসক এবং পূর্ত দফতরের আধিকারিকরা। ওই ইমামবাড়াটি হুগলির একটি অন্যতম প্রসিদ্ধ ঐতিহাসিক স্থান। এমন অমূল্য ঐতিহাসিক নিদর্শনের এমন ভঙ্গুর অবস্থা কেন ? সেই নিয়ে চিন্তিত এলাকাবাসীও।
১৮৪০ সালে সৈয়দ কেরামত আলি , হাজি মহম্মদ মহসীনের স্মৃতি উদ্দেশ্যে হুগলি ইমামবাড়াটি তৈরী করেছিলেন। তখনকার সময় ওই ইমামবাড়ায় রাখার জন্য, ১১ হাজার ৭২১ টাকা দিয়ে লন্ডন থেকে ব্ল্যাক এন মোরো বিগ ব্যান কোম্পানীর ঘড়ি নিয়ে আসা হয়। ১৮৫২ সালে সপ্তাহে আধ ঘন্টা ধরে দম দিতে হত ওই ঘড়িকে। শোনা যায় ঘড়িতে দম দিতে দু’জন লোকও লাগতো। জানা গেছে, ঘড়ির চাবির ওজন ২০ কেজি এবং তিনটি ঘন্টার ওজন প্রায় দেড় মন। তারপর থেকে আজ প্রায় ১৬৯ বছর অতিক্রান্ত। কিন্তু অবসরহীন ভাবে সেই একই ধারায় সময় দিয়ে যাচ্ছে ঘড়িটি। তাই ওই ঘড়িটি, এই ঐতিহাসিক স্থানটির একটি অন্যতম বিশেষ আকর্ষণও।
এছাড়াও ইমামবাড়ায় রয়েছে আরও একটি সূর্য ঘড়ি। ২২ বিঘা জমি জুড়ে গঙ্গার দক্ষিণ পারে অবস্থিত ইমামবাড়া হুগলির বহু প্রাচীন ইতিহাসের সাক্ষী। সঠিক যত্নের অভাবে ওই ইমামবাড়াই কালের নিয়মে ভগ্ন দশায় উপনীত হচ্ছে। আজ পলেস্তারা খসে ভেঙে পড়তে থাকে বিভিন্ন অংশ। ২০০৮ সালে হেরিটেজ ঘোষণা হয়েছিল হুগলির ইমামবাড়াকে। রাজ্য হেরিটেজ কমিশন ইমামবাড়া রক্ষণাবেক্ষণের কাজও ইতিমধ্যেই শুরু করে দিয়েছে। প্রায় দু’কোটি টাকা খরচও করা হচ্ছে। কিন্তু তারপরও এখনও পর্যন্ত ইমামবাড়ার অনেক অংশের সংস্করণের কাজ শেষ করে ওঠা যায় নি। ফলে বিপদজনক অবস্থায় থাকা অংশ, আজ হঠাৎই ভেঙে পরে।
খবর পেয়ে সেখানে পৌঁছায় চুঁচুড়ার বিধায়ক অসিত মজুমদার এবং পুর প্রশাসক গৌরীকান্ত মুখার্জী। পূর্ত দফতরের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারকে দ্রুত ডেকে পাঠিয়ে, ভেঙে পরা অংশ দেখান বিধায়ক। জেলাশাসক পি দীপাপ প্রিয়ার সঙ্গেও এ ব্যাপারে ফোনে কথা বলেন তিনি। সংস্কার কার্য দ্রুত শেষ করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও বিধায়ককে আশ্বস্ত করেন জেলাশাসক। জেলাশাসক বলেন,টাকার ব্যাবস্থা কোথা থেকে হয়, সেই দিকটি দেখেই দ্রুত কাজ শেষ করার চেষ্টা করবেন তাঁরা। ইমামাবাড়ার ম্যানেজার গৌতম দাস জানান ইতিমধ্যেই দশ কোটি টাকার ডিপিআর জমা দেওয়া হয়েছে হেরিটেজ কমিশনের কাছে। এই মুহূর্তে স্থানীয় বাসিন্দারাও চাইছেন যেন হুগলির এই ইতিহাস সুরক্ষিত থাকে, দ্রুত তার সংস্কারের কাজ শেষ করা যায়।