আজ খবর ডেস্ক- শবর সম্প্রদায়ের নাম অনেকেই শুনেছেন, আবার হয়তো অনেকেই শোনেননি। তাঁরা সমাজের আলো থেকে অনেকটা পিছিয়ে রয়েছেন। কার্যত অন্ধকারেই দিনযাপন হয় তাঁদের। সমাজের খোলামেলা পরিবেশ তাঁদের জন্য নয়, এমনটাই মনে করেন সমাজের অন্যস্তরের বেশিরভাগ মানুষ। সাজসজ্জা, আড্ডা আর দশটা স্তরের সঙ্গে মেশা যেমন দৃষ্টান্ত, তেমনই পড়াশুনোর ক্ষেত্রে ভালো ফল করা বা সামান্য পড়াশুনো করতে চাওয়ার মনোভাবটাও দৃষ্টান্তের পর্যায়ে পড়ে। তবে সেই বেড়া জাল ছিঁড়ে বেরিয়ে এসেছেন শকুন্তলা শবর। এর আগে রমনিতা শবর ইতিহাস সৃষ্টি করে ফেলেছিলেন শবর গোষ্ঠীদের মধ্যে প্রথম স্নাতক হয়ে।
বিয়ের পরেও বন্ধ করেননি লেখাপড়া বরাবাজারের ফুলঝোর গ্রামের এই মেয়ে। বরং নিজের ইচ্ছা শক্তির জোরে চালিয়ে গিয়েছেন শেষ পর্যন্ত আর তার ফল হাতেনাতে পেয়েছেন এবার। ঝাড়খণ্ডের কলহান বিশ্ববিদ্যালয়ের পটমদা কলেজের ছাত্রী শকুন্তলা। হিন্দিতে অনার্স নিয়ে পড়ার ইচ্ছা ছিল তাঁর। আর্থিক অভাবের মধ্যেও তেমনভাবেই এগিয়ে গিয়েছেন লেখাপড়ার মূলস্রোতে। ৬২ শতাংশ নম্বর অর্জন করেছেন শকুন্তলা। ছোটবেলা থেকেই যথেষ্ট অভাব অনটনের মধ্যে দিন কেটেছে তাঁর। বাবা অন্যের
পবাড়িতে কাজ করতেন এবং তাঁর মা কাঠ কুড়িয়ে লোকের বাড়িতে বিক্রি করতেন। এভাবেই চলত অভাব-অনটনের সংসার। শকুন্তলার পরে মেজ বোন বাসুমতি ইংরেজি অনার্স নিয়ে দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। বড় ভাই পড়ছে একাদশ শ্রেণিতে এবং ছোট ভাই মাধ্যমিক দিয়েছে। অন্য আরেক বোন বসবে মাধ্যমিকে। এতটা অভাব-অনটনের মধ্যেও এই পরিবার নিজেদের শিক্ষার আলো জ্বালিয়ে রাখার চেষ্টা করে চলেছিল বরাবরই। নিজেদের তৈরি করার লক্ষ্যমাত্রার দিকেই এগিয়ে চলেছেন শবর পরিবারের ভাইবোনেরা।
কলকাতা পুলিশের কর্মচারী অরূপ মুখোপাধ্যায়ের একটি আবাসিক স্কুল রয়েছে এই শবর সম্প্রদায় ছেলেমেয়েদের শিক্ষার আলো দেখানোর জন্যে। জীবনের মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন ওই পুলিশ কর্তা। তাঁর স্কুলটিও ওই এলাকায় ‘পুলিশ বাবা’ র স্কুল বলে পরিচিত হয়ে উঠেছে ধীরে ধীরে। স্কুলের নাম পুঞ্চা নবদিশা মডেল স্কুল।
জরাজীর্ণ জীবনযাপন, দুবেলা-দুমুঠো ঠিকমত খাওয়া জোগাড় হয় না যাদের। মাথার উপরে ছাদ নেই অন্যান্য সমাজে গেলেই মেলে লাঞ্ছনা ও গলা ধাক্কা। সেইসব মুছে ফেলে এখন অন্যান্যদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে আসার চেষ্টা চালিয়ে চলেছে এই সম্প্রদায়। আগামী দিনে এই সমাজ থেকেই আরও বৃহত্তর ক্ষেত্রে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করবে বলে মনে করেন অরূপ।