আজ খবর ডেস্ক:
পেশা বড় বালাই! ঝড়, জল, বৃষ্টি কোনও কিছুতেই হার মানে না কলম। কোনও পরিস্থিতিতেই মাথা নোয়ানো চলবে না। তাই বিপদের খাঁড়া মাথায় নিয়েই প্রতিদিন ছুটে চলে সাংবাদিক। চোখে দেখা দৃশ্যের কোলাজ।তার থেকেই তৈরি হয় প্রতিবেদন। মুহূর্তে খবর হয়ে তা উঠে আসে কাগজের পাতায়, টেলিভিশনের পর্দায় অথবা ডিজিটাল দৃশ্যকল্পে।
বই প্রকাশিত হল সাংবাদিক ত্রয়ন চক্রবর্তীর। ‘শুরুর শুরু’ বইটিতে নিজের সাংবাদিক জীবনের বিভিন্ন রকম অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন তিনি। এক সাংবাদিকের কলম যখন দিনের শেষে গল্প বলে, তখন তা কি নিছক গল্প? নাকি নিজের সঙ্গে কথোপকথন? রোজকার ঘামে ভেজা অভিজ্ঞতা তখন যেন আর গল্প থাকে না। দিন যাপনের কথামালা হয়ে যায়।
সাংবাদিক মানেই বাইরের মানুষের চোখে তাঁর অসীম ক্ষমতা ও প্রভাব। অথচ নিজের কর্মক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত কীভাবে কাটাতে হয় তার দলিল যেন এই বই।
নির্বাণ- এর জীবন কাহিনী তুলে ধরেছেন লেখক। কখনও সেখানে বলা হয়েছে রাজস্থানে ঘুরে বেড়ানোর অভিজ্ঞতা আবার কখনও বা তার সঙ্গে ভয়ঙ্কর করোনা অতিমারীর সময় হাসপাতাল ঘুরে রিপোর্টিং করার খুঁটিনাটি। এসেছে ভেঙে যাওয়া বেলওয়ারি কাঁচের মত জীবনের টুকরো হতাশা আর যন্ত্রণার কথা। আবার খুব সামান্য কিছুতেই অপার আনন্দ পাওয়ার ক্ষণস্থায়ী মুহূর্তের কথা।
অন্যদিকে সামান্য ভাতের হোটেল, সেখানে কেমন চলে দৈনন্দিন জীবন? সেই কথাও তুলে ধরেছেন লেখক। কখনও নাম না করে উর্দিধারীদের চিৎকার আবার তাঁদের ভর্ৎসনা। সেই সব কথা প্রকাশিত হয়েছে এই লেখায়। মর্গের ডোমের হাত ধরেই এসেছে কুমোর পাড়ার গল্প। বিস্তারিত বাস্তব অভিজ্ঞতা এক অন্য মাত্রায় তুলে ধরা হয়েছে লেখার মাধ্যমে।
মাত্র ৪৮ পাতায় নির্বাণের যাপন। কিন্তু বৈচিত্র্য নাড়া দেয় মনকে। স্টেশনের ফেরিওয়ালা, অসুস্থ হাসপাতালে ভর্তি তাঁর পরিবারের আত্মকথা। কোনও পুলিশের গল্প এবং আরও বিভিন্ন খ্যাতি সম্পন্ন ব্যক্তি বা কখনও অত্যন্ত সামান্য রাস্তায় রাত কাটানো মানুষটার কথা তুলে ধরা হয়েছে লেখার মাধ্যমে।
সাংবাদিকতা পেশা হিসেবে একেক জনের কাছে একেক রকম। নানা ঘটনার ভিড়ে কখনও থাকে আগামীর আশ্বাস, আবার কখনও ফিরে তাকানো অতীতের দিকে। যেখানে প্রশাসন আর তার কঠোর নীতির পাশে উঠে আসে আহত কষ্টে নিজেকে লুকিয়ে রাখা এক শ্রমিকের কথা।
আসলে সবটাই নিরপেক্ষতার প্রত্যাশা। আদতে যা সোনার পাথরবাটি। যে নিরপেক্ষতার কেনা বেচা হয় আসলে ক্ষমতার অলিন্দে। এই বইয়ের মধ্যে উঠে এসেছে সেই অসামান্য কথা যা মানুষকে হাসাবে আবার খুব সহজেই চোখে জল আনবে। পেশার টানে সারাদিন দৌড়ে বেড়ানো শরীর থেকে নিংড়ে নেওয়া ঘাম আর রক্ত যেভাবে কালি হয়ে ছাপার অক্ষরে প্রকাশিত হয় তা অত্যন্ত যত্নে ফুটিয়ে তুলেছেন ত্রয়ণ।