আজ খবর ডেস্ক:
লাগাতার বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত উত্তরবঙ্গ। জানা গেছে, বিশেষ করে দার্জিলিং, কালিম্পং সহ একাধিক পাহাড়ি অঞ্চল গুলিতে মাটি আলগা হয়ে ধ্বস নেমেছে। তাতে বন্ধ গেছে বেশ কিছু রাস্তা। এই বিপর্যয়ের কারণে পার্বত্য অঞ্চলের সাথে কার্যত সমতলের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তার ফলে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন পর্যটকরা। হাজার হাজার পর্যটক আটকে পড়েছেন পাহাড়ে। সমতলে ফেরার সমস্ত পথ বন্ধ হয়ে গেছে তাদের কাছে।
দার্জিলিং, কালিম্পং, লাভা, লোলেগাঁও, কোলাখাম, রিশপে আটকে রয়েছেন কমপক্ষে পাঁচ থেকে ছ’হাজার পর্যটক। টানা বৃষ্টির জেরে দার্জিলিং থেকে শিলিগুড়ি যাওয়ার ৫৫ নম্বর জাতীয় সড়কেও নেমেছে ধ্বস। তার ফলে গাড়ি চলাচল বন্ধ। বিকল্প রোহিণী রোড ধরে চলছে গাড়ি। শিলিগুড়ির মাটিগাড়ায় ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কের উপর বালাসান সেতুতে দেখা গিয়েছে ফাটল । যে কারণে বাগডোগরা বিমানবন্দর থেকে শিলিগুড়ি যাওয়ার ক্ষেত্রে মেডিকেল রোড (নৌকাঘাট) হয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। ত্রিবেণীর কাছে রাস্তার উপর দিয়ে বইছে তিস্তার জল। চিত্রেতেও ধস নেমে রাস্তায় বড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। লাভা থেকে গরুবাথান যাওয়ার রাস্তা সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে।
বিভিন্ন দিকের রাস্তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এমন বিপদে পাহাড় ছেড়েও বেরোতে পারছেন না পর্যটকরা। পাহাড়ের বিস্তীর্ণ এলাকায় গত দু’দিন ধরে বিদ্যুৎ পরিষেবা বন্ধ থাকায় মোবাইলে চার্জ দিতে পারছে না বেশিরভাগ পর্যটকরা। ফলে অনেকেরই মোবাইলের চার্জ শেষ হয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ করতে পারছেন না পরিবারের সঙ্গে।
ইতিমধ্যেই শিলিগুড়ি পুলিশের তরফ থেকে বিশেষ হেল্পলাইন নম্বর দেওয়া হয়েছে। যে কোনো রকম অসুবিধে হলে – ০৩৫৩২৬৬২২১০, ০৩৫৩২৬৬২০৬০, ৭৮৭২৭০৭৭৩৩ নম্বরে যোাযোগ করতে বলা হয়েছে।
যে সমস্ত অঞ্চল গুলিতে এই মুহূর্তে যান চলাচল বন্ধ আছে সেগুলি হলো –
১) লোধামা পিএস এবং লোধামা বাজারের মধ্যে প্রধান সড়ক ভূমিধসের কারণে সম্পূর্ণ বন্ধ।
২) দার্জিলিং -এর সাথে চংটাং সংযোগকারী প্রধান সড়ক বন্ধ।
৩) মহানদী এনএইচ ৫৫ -এর কাছে চেউরি ভিড় এ রাস্তাঘাট বন্ধ হয়ে যায়। ঘুয়াবাড়ি দিয়ে দুই চাকা এবং হালকা যানবাহন সরানো করা হয়েছে। রাস্তাগুলি পরিষ্কার করতে ইতিমধ্যেই বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
৪) লোধামা থেকে পর্যন্ত পথ মানেভঞ্জন বন্ধ
৫) বড় যানবাহনের ক্ষেত্রে লেবং কার্ট – এর রাস্তা এড়িয়ে যেতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
৬) কালিঝোড়ায় ২৯ তম মাইল ভূমি ধ্বসের কারণে এনএইচ ১০ বন্ধ করা হয়েছে ।
৭) সুখিয়াপোখরি থেকে দুধিয়া আয়রন ব্রিজ পর্যন্ত রাস্তা বর্তমানে পণ্যবাহী যানবাহনের জন্য বন্ধ রয়েছে।
৮) জোড়বাংলোকে বিজনবাড়ির সাথে সংযোগকারী প্রধান সড়কটি ভূমিধ্বসের কারণে বর্তমানে বন্ধ রয়েছে।
৯) রিম্বিক থেকে শ্রীখোলার সাথে সংযুক্ত থাকা রাস্তা বর্তমানে বন্ধ।
১০) শিব মন্দির রোডের কাছে লবধা রোড (মুংপু) বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
যে সকল রাস্তা গুলি এখন যাতায়াতের জন্য খোলা আছে সেগুলি হল –
১) লেবং-বাদামতম রাস্তা পরিষ্কার করা হয়েছে এবং এটি এখন যাতায়াত যোগ্য।
২) শিলিগুড়িগামী গাড়িগুলিকে রোহিণী বা পানখাবাড়ির রাস্তা দিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। উভয় রাস্তাই খোলা রয়েছে।
৩) সুখিয়াপোখরি থেকে দুধিয়া আয়রন ব্রিজ পর্যন্ত রাস্তা শুধুমাত্র ছোট যানবাহনের জন্য রাস্তা খোলা।
৪) সিকিম থেকে শিলিগুড়িগামী যাত্রীবাহী যানবাহনগুলিকে পেশোক রোড ধরে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
৫) কাইঞ্জালিয়া থেকে বিজনবাড়ী পর্যন্ত সড়ক যান চলাচলের জন্য ঠিক করে দেওয়া হয়েছে।
৬) লেবং কার্ট শুধুমাত্র ছোট যানবাহনের জন্য খোলা।
যেকোনো জরুরী অবস্থা বা প্রশ্নের জন্য, এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করতে পারেন।
হেল্পলাইন নম্বর :
কন্ট্রোল রুম – 03542252057
9083270435
দার্জিলিং – 9083270413
9083270405
কার্সিওং – 9083270415
9083270411
গ্রামীণ (নকশালবাড়ি, খরিবাড়ি, ফানসিডেওয়া) – 9083270410
9083270407
এক পুলিশ আধিকারিক জানিয়েছেন, ধ্বসের কারণে বিভিন্ন দিকের রাস্তা বন্ধ থাকায় বড় গাড়ি চলাচল আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। ধসের ফলে রাস্তায় বড় বড় পাথর পড়ে রয়েছে। তার মধ্যে দিয়েই কোনও রকমে ছোটো গাড়িগুলিকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। শিলিগুড়ি পুলিশের তরফে টুইট করে বলা হয়েছে, ‘১০ নম্বর জাতীয় সড়কের উপরে ২৯ মাইলের কাছে বড় ধস হয়েছে। রাস্তা পরিষ্কার করতে সময় লাগবে। তাই শিলিগুড়ি থেকে ছোট গাড়িগুলিকে করোনেশন সেতু, তিস্তা ও রংপোর দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’
গরুবাথানের বাসিন্দা রঞ্জিৎ রাই ফোনে জানান, ‘‘চার দিকের অবস্থা খুব খারাপ। গরুবাথান, কালিম্পঙের সব রাস্তা বন্ধ। ৬ মাইল, ৯ মাইলের কাছে ধস নেমেছে। রাস্তা পরিষ্কার করা হলেও বার বার পাথর পড়ে তা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বোঝা যাচ্ছে না।’’
দার্জিলিঙের জেলাশাসক এস পুন্নমবলম বলেন, ‘‘বহু জায়গায় বিশেষত গ্রামীণ এলাকায় ছোট ছোট ধস নেমেছে। ৫৫ নম্বর জাতীয় সড়কের উপরে একটি বড় ধস নেমেছে। যদিও বিকল্প রাস্তা খোলা রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলিতে যাতায়াত চলছে।’’ এখন পর্যন্ত বিপর্যয়ে ১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার দুপুরে কালিম্পং থেকে গরুবাথান আসার পথে লাভা রোডে, ৩ মাইলে একটি ছোট গাড়ির চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছে ধাক্কা মেরে খাদে পড়ে যায়। পুলিশ জানিয়েছে, মৃত গাড়ি চালকের নাম কৈলাস বর্মণ।
তবে শুধু পাহাড়ই নয়, একনাগাড়ে বৃষ্টি হাওয়ায় তিস্তার জলস্তর বেড়ে জলপাইগুড়ির নিচু এলাকাগুলিতে জল ঢুকতে শুরু করেছে৷ জল বিপজ্জনক সীমা পেরোনোর আগেই আশঙ্কাপ্রবন এলাকাগুলি থেকে ইতিমধ্যেই বেশ কিছু পরিবারকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে৷ মাইকেও প্রচার শুরু করেছে জেলা প্রশাসন৷ আজও উত্তরবঙ্গের কোচবিহার, জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার জেলায় ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়ে আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর৷ ফলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে৷ তার মধ্যে তিস্তা ব্যারেজ থেকেও জল ছাড়া হয়েছে৷ ফলে প্লাবিত হয়েছে বেশ কিছু এলাকা৷ তাই আপাতত আগামী দু’ দিন পর্যটকদের দার্জিলিং এবং কালিম্পংয়ে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে প্রশাসন।