আজ খবর ডেস্ক- রবিবার সন্ধ্যায় চিরতরে হল্ট নিয়ে স্মৃতির স্টেশনে পাড়ি দিল কলকাতার নন এসি মেট্রো। ৩৭ বছর আগে প্রথম এসপ্লানেড থেকে নির্ধারিত সময় ৮ টা থেকে ৩৬ মিনিট দেরিতে পথ চলা শুরু করে কলকাতার প্রথম মেট্রো রেল ( নন এসি)। ভিড়ের চাপে সকাল সাড়ে ৮টার বদলে ট্রেন চলা শুরু হয়েছিল ৮টা ৩৬ মিনিটে। তাই রবিবারও শেষ বারের মতো স্মৃতি উস্কে নির্ধারিত সময় বিকেল সাড়ে ৫ টার পরিবর্তে ৫টা ৩৬ মিনিটে ছাড়লো নন এসি রেক। কর্ণাটকের নিউ গভর্নমেন্ট ইলেকট্রিক ফ্যাক্টরি (এনজিইএফ) সংস্থার সহযোগিতায় তৈরি যে রেক প্রথম দিন ছুটেছিল, এদিনও সেই একই সংস্থার তৈরি নন এসি রেক ছুটল রেলওয়ে ট্র্যাকে।

সাড়ে তিন দশক যে সময় এই শহরে মেট্রো রেল চালানো শুরু হয়েছিল সেই সময় দেশের প্রযুক্তিবিদদের রেল চালানোর অভিজ্ঞতা থাকলেও মাটির নীচ দিয়ে কি ভাবে রেল চালানো হবে সেই অভিজ্ঞতা ছিল না। শুধু তাই নয়, মাটির নীচ দিয়ে রেল চালানোর জন্য সুড়ঙ্গ কাটতেও বহু প্রতিবন্ধকতার মধ্যে পড়তে হয়েছে নির্মাতাদের। কাজ শুরু হওয়ার প্রায় ১১ বছর পর এসপ্লানেড থেকে ভবানীপুর পর্যন্ত মেট্রো পরিষেবা চালু করা সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু দমদম থেকে টালিগঞ্জ পর্যন্ত মেট্রো ছুটতে কাজ শুরুর পরে লেগেছে গিয়েছিল আরও ২৩ বছর। তারপর থেকেই ভিড়, বিলম্ব, যান্ত্রিক গোলযোগ থেকে শুরু করে নানান ওঠাপড়ার মধ্যেও এসি রেকের সঙ্গী হয়ে থেকেছে এই নন এসি রেক গুলি। শুধু তাই নয়, উৎসব, পার্বণ বা বিশেষ কোনো অনুষ্ঠানেও চাপ সামলাতে মেট্রো কর্তারা নির্দ্বিধায় আস্থা রেখেছেন এই নন এসি মেট্রোয়।

তাই রবিবার মেট্রো রেলওয়ের ৩৭ তম প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে একটি নন AC মেট্রো রেকের অন্দরে বিশেষ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছিল। N-12/14 নম্বর মেট্রো রেকটির ভিতরেই আয়োজিত হয়েছিল ওই অনুষ্ঠান। প্রথম দিনের মেট্রোর ঝলক থেকে নানান রঙিন পোস্টার ও মেট্রোর বিবর্তনের ছবি সাজানো হয়েছিল রেকটিকে। তুলে ধরা হয়েছিল মেট্রোর না জানা ইতিহাস। প্রদর্শনীতে কলকাতা মেট্রোর বর্তমান এবং ভবিষ্যতের ঝলকও কিছুটা দেখানো হয় ওইদিন। এক্সিবিশনটি হয় মহানায়ক উত্তম কুমার স্টেশনে। যেই কারণে সাজিয়ে তোলা হয়েছিল স্টেশন চত্বরও।

ওইদিন কলকাতা মেট্রোরেলের জেনারেল ম্যানেজার মনোজ যোশী প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন। মেট্রোর প্রথম দুই চালক সঞ্জয় শীল এবং তপন নাথ ১৯৮৪ সালের অতীত স্মৃতি জীবন্ত করে নিজেদের দীর্ঘ কর্মজীবনের অভিজ্ঞতা জানান।

প্রদর্শনীর শেষে ওই নন AC মেট্রো রেকটিকে নোয়াপাড়া কারশেডে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। অতীতের ট্র্যাক ধরে চিরবিদায় জানানো হয় নন AC রেককে। উল্লেখ্য, ১৯৮৪ সালেও ২৪ অক্টোবর প্রথম মেট্রো চলেছিল, আর অন্তিম দিনও সেই ২৪ অক্টোবর। শুধু বদলেছে সালটা।

প্রসঙ্গত, ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রোকে আপাদমস্তক সাজিয়ে তোলা হয়েছে আধুনিক ভাবনায়। স্ক্রিন ডোর থেকে শুরু করে AC রেক সবকিছুই একেবারে আধুনিক। এদিকে হাওড়া ময়দান রুটের অধিকাংশ কাজই প্রায় শেষ, শুধুই শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে সেখানে। East West Metro -এর পশ্চিম দিকের টার্মিনাল স্টেশন, হাওড়া ময়দানে প্রায় তৈরি। তবে তুলনামূলক ঘিঞ্জি এলাকাগুলিতে মেট্রো স্টেশন তৈরির কাজ ছিল সবথেকে চ্যালেঞ্জিং। তবে কলকাতা মেট্রো রেল কর্পোরেশন লিমিটেডের প্রযুক্তিবিদরা দক্ষতার সঙ্গে সেই কাজটি সম্পন্ন করেছেন। তাই বর্তমানে নতুনভাবে মেট্রো পরিষেবা পেতে অপেক্ষায় দিন গুনছেন যাত্রীরা ।

স্টেশনের নামেই ময়দান রয়েছে, তাই এখানকার থিমেও থাকছে খেলাধূলাই। একই কারণে সল্টলেক স্টেডিয়াম স্টেশনের থিম হিসেবেও খেলাধূলাকেই বেছে নেওয়া হয়। তবে সল্টলেকের মতো পরিকল্পিত এলাকায় স্টেশনের তৈরির কাজ খানিকটা সহজই ছিল। কিন্তু, কর্মব্যস্ত হাওড়া ময়দানে সেই কাজ ততটাও সহজ ছিল না।

ভারতের মধ্যে কলকাতায় সর্বপ্রথম মেট্রো পরিষেবা চালু হয়। তার বেশ কিছু বছর পর অন্যান্য রাজ্যে মেট্রো পরিষেবা চালু হয় আধুনিক গঠনে তৈরি হয় সেখানকার মেট্রো। তাই এবার অন্যান্য রাজ্যের সাথে কাঁধ মিলিয়ে চলতে প্রস্তুত কলকাতা মেট্রো। তার প্রথম পদক্ষেপে নন এসি রেকের বিদায়ে এবার থেকে শুধু এসি রেক চলার ঘোষণা করলো কলকাতা মেট্রো আধিকারিকরা। প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি এই মুহূর্তে শহরে ২৮টি এসি রেক রয়েছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *