আজ খবর ডেস্ক- শিশু সুরক্ষা প্রতিষ্ঠা ও নিগ্রহ রোধে পশ্চিম বর্ধমান জেলার তরফ থেকে এক অভিনব উদ্যোগ নেওয়া হল। তৈরি করা হল ‘জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ড’। আসানসোল আদালতের কাছে ‘কথা ভবনে’ এই বোর্ডের কার্যালয় তৈরি করা হয়েছে। গত বুধবার কার্যালয়ের উদ্বোধন করেছেন রাজ্যের নারী ও শিশুকল্যাণ দফতরের মন্ত্রী শশী পাঁজা। সাথেই কালিম্পংয়ের জন্যও জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডের উদ্বোধন করেন মন্ত্রী। এই বোর্ড তৈরি হওয়ায় সুবিধে পাবে পশ্চিম বর্ধমানের শিশুরা। এবার শিশুদের আর আইনি সহায়তার জন্য পশ্চিম বর্ধমান থেকে পূর্ব বর্ধমানে যেতে হবে না।
পশ্চিম বর্ধমান জেলা প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, শিশু ও নাবালক-নাবালিকাদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা দেওয়ার লক্ষ্যে এবং তাদের উপর নিগ্রহ রোধ করতে আইনি সহায়তা সুনিশ্চিত করা জরুরি। সেই সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে প্রতিটি জেলাতেই সমাজকল্যাণ দফতরের অধীনে তিনটি পৃথক কমিটি থাকে— ‘ডিস্ট্রিক্ট চাইল্ড প্রোটেকশন ইউনিট’ (ডিসিপিইউ), ‘চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি’ (সিডব্লিউসি) এবং ‘জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ড’ (জেজেবি)। প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, শিশু-সুরক্ষা সম্পর্কিত যে সমস্ত প্রকল্প সরকার তৈরি করে সেগুলি বাস্তবায়িত করার দায়িত্ব মূলত ডিসিপিইউ-এর। তাদের এই দায়িত্বের মধ্যে রয়েছে, বিভিন্ন স্টেশন, বাসস্ট্যান্ড বা পরিত্যক্ত অঞ্চলে কোনও শিশুকে অনাথ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা গেলে তাদের নিরাপদ হোমে পাঠানোর ব্যবস্থা করা । অন্যদিকে সরকার নির্দেশিত সুরক্ষা দেওয়ার কাজ যথার্থ উপায় প্রয়োগের কাজ মূলত সিডব্লিউসি-র উপর রয়েছে। আর শিশু-নিগ্রহের ঘটনার ক্ষেত্রে তাকে আইনি সহায়তা প্রদান করা ও কোনও শিশু অপরাধ ঘটালে তার বিচারের ব্যবস্থা করার কাজটি জেজেবি – র উপর ন্যস্ত থাকে।
বুধবার মন্ত্রী শশী বলেন, “পশ্চিম বর্ধমান জেলায় অনেক আগেই ডিসিপিইউ ও সিডব্লিউসি তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু জেজেবি তৈরি না হওয়ায়, এই জেলার শিশুদের এত দিন আইনি সহায়তা পেতে পূর্ব বর্ধমানে ছুটতে হত। এতে শিশু মনে নানা ধরনের প্রভাব পড়ছিল। তাই সরকার এই জেলাতেও জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ড তৈরি করল।”
এই নতুন গঠিত বোর্ডের কাজ হবে, নিগৃহীত শিশুদের আইনি সহায়তা দেওয়া, শিশু-অপরাধের ঘটনা ঘটলে তাদের বিচার ব্যবস্থার আওতায় আনা এবং বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিচারাধীন শিশুকে একটি শিশুবান্ধব পর্যবেক্ষণ কক্ষে রাখার ব্যবস্থা করা। এরপর শিশুটি দোষী প্রমাণিত হলে তাকে সংশোধন করার জন্য নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বিশেষ হোমে পাঠানো হবে।
দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, পর্যবেক্ষণ কক্ষগুলির পরিবেশ এমন ভাবে তৈরি করা হচ্ছে, যাতে শিশুদের ওই কক্ষে থাকাকালীন কখনও মনে না হয় যে তারা কোনও অপরাধ-কক্ষে বন্দি রয়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে বলা হয়েছে, ‘জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ড’-এ তিন জন সদস্য থাকেন। সেখানে বিচারক হিসেবে থাকবেন জেলা আদালতের এক জন বিচারক ও তাঁর সঙ্গে আরও দু’জন বিশিষ্ট ব্যক্তি থাকবেন। আগামী কিছু দিনের মধ্যেই প্রশাসনের তরফ থেকে বোর্ড সদস্যদের নাম ঘোষণা করা হবে।
ওদিনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা আদালতের অতিরিক্ত দায়রা বিচারক শ্রীময়ী কুণ্ডু। তিনিও এই পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।